ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

স্বাধীনতা ও কবির অনুভব | ফজলুল হক সৈকত

প্রবন্ধ ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
স্বাধীনতা ও কবির অনুভব | ফজলুল হক সৈকত

‘আসমানের তারা সাক্ষী/ সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই/ নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী/ সাক্ষী এই জারুল, জামরুল সাক্ষী/ পুবের পুকুর আর ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি/ মাছরাঙা আমাকে চেনে/ আমি কোনো অভ্যাগত নই/ খোদার কসম আমি ভিনদেশী পথিক নই/ আমি কোনো আগন্তুক নই। ’

কবি আহসান হাবীবের এই অবস্থান প্রসঙ্গ ও আত্ম-পরিক্রমায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে প্রত্যয়, তা আমাদের নিজস্ব শক্তি।

এই শক্তিই শিল্পকে সাহিত্যকে বারবার স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। বাঙালির ইতিহাসে হাজার বছরের একটি টার্নিং পয়েন্ট হলো ১৯৭১ সাল। আর তার অন্তরালে ছিলো মূলত স্বাধীনতার প্রত্যাশা এবং জাতীয় চেতনার প্রতি বিশ্বস্ততা। বিষয়টি প্রবলভাবে রাজনৈতিক হলেও এর সাংস্কৃতিক চরিত্র রয়েছে। বাঙালির সব সংগ্রামে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সবসময় উপাদান ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৭১-ও তার ব্যতিক্রম নয়। শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ও স্তরের মতো কবিতাও সর্বদা সতর্ক থেকেছে প্রহরীর ভূমিকায়। আর দিক-নির্দেশনা এবং ধারাবিবরণীও কবিতার একটি জরুরি দায়িত্ব বলে বারবার প্রমাণিত।

কবি আবুল হোসেন বলেছিলেন, ‘যেখানে মানুষ থাকে, থাকবেই জঞ্জাল, দুর্গন্ধ,/ কিছু বিশৃঙ্খলা, হই হুল্লোড়, কী এমন হল তাতে?/ অনেক গোয়াল, আস্তাবল, এমনকি শুয়োরের খোয়াড়ও এর চেয়ে ভালো। ’
(মানুষ যায় না ঘর ছেড়ে)

তবে মানুষ চায় নিজের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে। বাঁচাতে চায় নিজস্ব জমিনের অধিকার। ‘অগ্রজের পদচিহ্ন’ কবি কবিতায় আতাউর রহমান লিখেছেন, ‘অগ্রজের রক্তাক্ত পদচিহ্ন ধরে/ আমি এগিয়ে চললাম গভীর অন্ধকার ছিন্ন করে/ আমি সূর্যোদয়কে সম্ভব করলাম। ’ জাতীয় সঙ্কটের কবি শামসুর রাহমান দেশভাগ-পরবর্তীকালে ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। ভারত বিভাজনের ফলে কলকাতাকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে ছিটকেপড়া ঢাকাকেন্দ্রিক আনকোরা সাহিত্যচর্চার এক ক্রান্তিলগ্নে তার কবিজীবনের প্রারম্ভ। একদা ‘বিবরবাসী অন্তর্জীবনে সমর্পিত’ কবি, ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠলেন ‘বহির্জীবনের প্রতি মনোযোগী এবং রাজনীতি-মনস্ক’। তার কবিতায় জাতির আত্ম-জিজ্ঞাসার ভাষা নির্মিতি লাভ করেছে। রাহমানের কবিধর্ম হলো, মানবতাবিরোধী কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। পরাধীনতা ও শোষণের গ্লানিমোচনের যে মানবিক আকাঙ্ক্ষা তিনি বর্ণনা করেছেন, তা একজন কথাকারিগরের আপন-অভিব্যক্তিরই বহির্প্রকাশ মাত্র। স্বাধীনতার জন্য আকুল অপেক্ষা, প্রজন্মপ্রহর আর অর্থনৈতিক স্থিতি-অস্থিতির কালযাপনের ক্লান্তি শামসুর রাহমান অনুভব করেন ‘শূন্য থালা হাতে’ ‘পথের ধারে’ বসে-থাকা ‘হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী’র উপলব্ধির গাঢ়তায়।

কবি বাঙালি জাতির মনন-চেতনকে আঁকছেন এভাবে, ‘তোমার জন্যে,/ সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ন কৃষক,/ কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,/ মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,/ গাজী গাজী ব’লে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে/ রুস্তম শেখ, ঢাকার রিক্শাওয়ালা, যার ফুসফুস/ এখন পোকার দখলে/ আর রাইফেল কাঁধে বনে-জঙ্গলে ঘুরে-বেড়ানো/ সেই তেজী তরুণ যার পদভারে/ একটি নতুন পৃথিবী জন্ম হ’তে চলেছে-/ সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা। ’
(তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা)

সেই প্রত্যাশিত স্বাধীনতার উপমান তারই কবিতায় কতো বিপুল-ব্যাপৃত। ‘রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান’ আর নজরুলের ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা’ সৃজন-ব্যাকুলতায় জনতাকে যেনো হাতড়ে ফিরতে হয় স্বাধীনতার স্বাদ। তিনি লেখেন, ‘স্বাধীনতা তুমি/ বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর/ শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ। / স্বাধীনতা তুমি/ চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ। ... স্বাধীনতা তুমি/ গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,/ হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম। / স্বাধীনতা তুমি/ খোকার গায়ে রঙিন কোর্তা,/ খুকীর অমন তুলতুলে গালে/ রৌদ্রের খেলা। ’ (স্বাধীনতা তুমি)



প্রকৃতির নির্মলতা-স্বাভাবিকতা, পরিবার ও সমাজের নীতিপ্রীতি-ধর্মযাপন, মায়ের আনন্দ, বোনের খুশী, সাফল্যের পথে বন্ধুর এগিয়ে চলা- সবকিছুর ভেতরে লুকিয়ে থাকে ঝিনুকের মোড়কে থাকা মুক্তার মতো সম্ভাবনা। শামসুর রাহমান মায়ের শুকাতে দেওয়া শাড়ি আর বোনের মেহেদীরাঙা হাতের আহ্বানে দেখতে পান শান্তিনিবিড় মাতৃভূমি। বাবার প্রার্থনারত হাতের তালুতে ঝুলতে থাকা থোকা থোকা স্বপ্ন বুনতে চান তিনি স্বাধীন দেশের উর্বর মাটিতে। আর ঘরে ঘরে নির্মাণ করতে চান অফুরন্ত শান্তির সুবাতাস। স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা তাই করা নয়; তারও আছে সীমারেখা, রয়েছে মাপকাঠি। প্রাপ্তির স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশে আমরা যেনো দিশেহারা হয়ে না পড়ি; সীমানা অতিক্রম না করি সে বিষয়ে কবি শামসর রাহমান আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন- ‘স্বাধীনতা তুমি... যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’ বলে। জাতির বিপর্যয়, অনাকাঙ্ক্ষিত দুঃশাসন, অবরুদ্ধ জীবনের যন্ত্রণা শামসুর রাহমানের বোধ আর দায়গ্রহণের মানসিক শীতল-উর্বর ভূমিতে গড়েছে কবিতাসৃজনের শান্ত পরিসর।



আলাউদ্দিন আল আজাদ বামপন্থী চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বামপন্থী রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলন এবং প্রগতিশীল সাহিত্য-আন্দোলনে আজাদের সাহসী ভূমিকা আজ অনেকেই ভুলে গেছেন; কিন্তু পথে-মাঠে-ময়দানে ও শিল্পকর্মে তিনি মার্ক্সীয় ভাবধারাকে সমুন্নত রাখার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। তার কবিতার এক বিরাট পরিসর সংগ্রামী চেতনাসমৃদ্ধ এবং বোধজাগানিয়া উপলব্ধিতে সমুজ্জ্বল হলেও কাব্যসম্ভারের অনেকাংশেই প্রেম ও প্রকৃতিনির্ভর, ব্যক্তিগত ভাবানুভূতি, আবেগ-আর্তি এবং স্বপ্ন-কল্পনা-আশ্রয়ী, নারী-প্রেম এবং ব্যাপকঅর্থে মানবপ্রেম উপজীব্য হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এবং সরকারি চাকরির কারণে বিদেশে বিশেষত রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থানকালে রচিত অধিকাংশ কবিতায়-বিশেষভাবে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতায় ব্যক্তিমনের ভাবানুভূতি বিচিত্ররূপে প্রকাশ পেয়েছে। কোথাও কোথাও তির্যকতা এবং কিছুটা ব্যঙ্গের ছোঁয়াও লেগেছে। কিন্তু আলাউদ্দিন আল আজাদ এ পর্যায়ের কবিতায় উচ্চকণ্ঠ নন, বরং অনেকটা আত্মনিমগ্ন বা আত্মসমাহিত। পূর্বসুরীদের ভাবনাধারার প্রভাব ও পরিগ্রহণকে আত্মস্থ  করে আলাউদ্দিন আল আজাদ নিজের কাব্যরীতি ও কাব্যবৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে নিয়েছেন; যোগ করেছেন ব্যক্তিগত ও বৈশ্বিক অনুভবরাজি। আবার সমাজ বদলে সৈনিকের ভূমিকা পালনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেও, তিনি কবিতাকে নিছক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি; কবিতায় শৈলী নির্মাণের দিকেও বিশেষ দৃষ্টি রেখেছেন। আর এই শৈলীতে স্থান পেয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানান অলিগলির বাঁকা পথ; যুক্ত হয়েছে দু’পাশের দৃশ্যাবলি এবং জনস্রোত। সভ্যতার নিচু স্তর থেকে ক্রমাগত ওপরে ওঠার সিঁড়ি হাতড়ে ফিরেছেন তিনি। গণতন্ত্রের হাহাকার ছিল তাঁর; যদিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই বিশেষ তন্ত্রের চেহারাটুকুর ছিটেফোঁটাও চোখে দেখে যেতে পারেননি। তবে তার সে আবেগ ধরা রয়েছে কবিতার সেলুলয়েডে; এই মাটিলতাময় পৃথিবীর কাব্যপাঠের আসরেও হয়তো দোল খাবে তার গণতন্ত্র-বিষয়ক ধারণারাজি।

আমরা জেনে নিতে পারি তার ভাবনার গণতন্ত্রের রূপরেখা, ‘ঝোপঝাড় মাঠবন প্রান্তরের/ শরীরে জড়ানো সবুজ কাঁথায়/ লেখো পুষ্পের বর্ণলিপিতে, লেখো/ লেখো আমি গড়ে তুলি গণতন্ত্র!/ ধানের গমের গুচ্ছ গণতন্ত্র/ পাটের তুলোর জন্ম গণতন্ত্র/ ক্ষুধার তৃষ্ণার তৃপ্তি গণতন্ত্র/ দিনের রাতের দীপ্তি গণতন্ত্র’
(গণতন্ত্র)

এই পৃথিবীর পথে-প্রান্তরের চেনা সন্তান আলাউদ্দিন প্রবল অস্তিত্ব সচেতন। চারপাশের বনবাদাড়-নদী-সমুদ্র-বীজতলা তার জানা; তাকে চেনে এসব দৃশ্যাবলির আদিঅন্ত সীমানা।

‘মেঘবরণ’ চুলের অধিকারী ‘কুঁচবরণ কন্যা’কে গলায় সাত নরীর হার পরাতে গিয়ে ছেঁড়া-গামছার ফাঁস দেখে চমকে-ওঠা কিংবা পরকালে প্রিয়তমাকে পাবার বিচিত্র স্বপ্নজালে ভাসতে থাকা আমৃত্যু কবিতালগ্ন কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সারাজীবন খুঁজে বেড়িয়েছেন অধরা কোনো মানবীয় অভিজ্ঞতা। প্রেম আর রোমান্টিকতাকে আশ্রয় করে কবিতাচর্চা আরম্ভ করলেও তিনি পরবর্তীকালে দেশমাতা-নিজভাষা, মাটি-মানুষ আর প্রজন্ম-পরিক্রমার কবি হিসেবে স্থিতি অর্জন করেন। ওবায়দুল্লাহর প্রেরণামুখি কবিতা ‘বৃষ্টি এবং সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’। তিনি এই কবিতায় প্রয়োগ করেছেন শান্তিময় পৃথিবীর কোমল প্রার্থনা। প্রসন্ন-উর্বর মাটি, দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন উদার চোখ, শূন্যবৃত্তের গভীরে সঙ্গীতময়তা, গোলাপের ছড়ানো নিবিড় সুখস্পর্শ, শুকনো পাতার অসহায় ভঙ্গি, নিঃসঙ্গতা প্রভৃতির পাঁজরে বাঁধতে চান কবি, বৃক্ষ-মৃত্তিকা-কৃষক-শস্য-ভালবাসার বর্ণাঢ্য অভয়-অরণ্য। কবির অনুভব, ‘পাখিরা বসতে পারে এমন কোনো বৃক্ষ নেই/ জোনাকি লুকাতে পারেন এমন কোনো গুল্ম নেই/ সূর্য শীতল হবে এমন কোনো নদী নেই/ এবং আমার বিচিত্র শব্দাবলী বিবর্ণ/ বৈশাখের শিলাপাতে আহত শস্যের মত বিচূর্ণ/ যুবকের বুকে ভালবাসার মত আগ্নেয়াস্ত্র/ এক টুকরো খামারের জন্য,/ মেয়েরা শেফালির ঝুড়িতে আগুন চেপে ঘুরে বেড়ায়/ অথচ ওরা মা হতে পারতো/ এবং আমার চিৎকার মাটির নিম্নতম শূন্যতায়-/ যে সাহসী সে যুদ্ধে গেছে/ যারা যুদ্ধে যায় তারা ফিরে আসে না। ’

হৃতগর্ব দেশমৃত্তিকার ঐতিহ্য আর মর্যাদা ফিরে পাবার হাহাকার-প্রার্থনা আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর এই কবিতায় পরিব্রাজকের অন্তর্লীন মন্দ্রিত কষ্ট-প্লাবনের মতো দাগ কেটে গেছে। তার প্রার্থনা দুর্বলচিত্ত-ভীতিপ্রবণ অলস মানুষের জন্য নয়; সাহসী পুরুষের জন্য। নিষ্ফলা মাঠে কৃষক-পুরুষের আর্তনাদ, ভালবাসার যুবকহীন বাড়ির রমণীদের আহাজারি আর সুবাতাস এবং ফসলবতী মা-গাভী-শস্যবৃক্ষের অধীর প্রত্যাশার গল্প বলতে গিয়ে, প্রকৃতঅর্থে, কবি স্বাধীনতাকেই আহ্বান করেছেন অগণিত উন্মুখ মানুষের নীরব কাতারে দাঁড়িয়ে।

কবিকে ‘মেধাবী’ বলা যায় কিনা অথবা বললে তার সৃজন-অনুরণনকে অবমূল্যায়ভারে আনত হতে হয় কিনা- এসব বিষয় বিবেচ্য রেখেই, আবুল হাসানকে বলা যায় ‘প্রতিভা’। যে প্রতিভার শক্তি আর আলোকে তিনি নির্মাণ করেছেন আত্ম-পরিভ্রমণের বর্ণনলিপি। কোলরিজের মতে, ‘কোনো কবিই বড় কবি হতে পারেনি সত্যসন্ধ দার্শনিক হওয়া ছাড়া। ’ আর মার্কিন কবি জীন গ্যারেজের আরও স্পষ্ট উচ্চারণ, ‘একটি কবিতার প্রতিটি পংক্তিই হলো এক আত্মজীবনী। ’
জীবন সম্বন্ধে, বিশেষত নিজের জীবন সম্বন্ধে শৈল্পিক নিয়তির অনুভব, আত্মচিহ্নায়নের বিকাশ, শাশ্বত সামষ্টিক সম্পর্কসূত্র-অন্বেষা আর মগ্নচৈতন্যের অভিকেন্দ্রিকতাকে আবিষ্কারের মধ্যেই আবুল হাসানের কবিতা-সৃজন-বেদনা আলোর পথে রাখে পদচিহ্ন। প্রথম থেকেই তার কবিতায় দার্শনিকতার নিবিড় স্থাপনা পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি হয়ে ওঠেন আত্ম-বিবরণের কবি, ক্রমাগত এগোতে থাকেন নিজের ভেতরকে প্রকাশ করার আর পারিপার্শ্বকে নিজ-পরিচয়ে তুলে আনার আপ্রাণ প্রচেষ্টায়। আবুল হাসান দেখেছেন, প্রকৃতঅর্থে, আমরা ভালো থাকি না; ভান করি মাত্র। অন্ধকারে আলো কুড়াতে-থাকা মগ্ন মানুষ কি সত্যিই বলতে পারে- সে ভালো আছে? না, পারে না। সভ্যতার অগ্রগমণে মানুষের পায়ের আওয়াজ আর পানিপতনের শব্দে সৃজনশীলব্যক্তি সঞ্চয় করেন সবুজাভ শক্তি। বেদনা আর ভবালাবাসার ভাষা খুঁজতে-থাকা কবি হাসান যেনো অজান্তে বুকের ভেতর গড়ে তোলেন অক্ষরভরা উপন্যাসের জরা-পাহাড়। এক সময় তার কণ্ঠ শোককাতর হয়ে ওঠে। তিনি স্বাধীনতার পতাকায় দেখতে থাকেন চেনা মানুষের মুখ, মুখের প্রতীক্ষা, আপনজন হারানোর যন্ত্রণা-আভাস, ‘তবে কি আমার ভাই আজ/ ঐ স্বাধীন পতাকা?/ তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?’
(উচ্চারণগুলি শোকের)

শিল্পের প্রতি, তার লাবণ্য আর প্রসন্নতার প্রতি দারুণ আস্থাশীল কবি আবুল হাসান। সকালবেলার রোদমাখা প্রিয়ার নরম হাত, তার লজ্জানত মুখ, চুল থেকে ভেসে আসা সুগন্ধী বাতাস আর মনের কোণে লুকিয়ে-থাকা ইচ্ছাগুলিকে তিনি শিল্পের তাজা জলে ভিজিয়ে নিতে চান। অবশ্য তিনি ‘প্রত্যাবর্তনের সময়’ দেখেছেন- আলোকসভা নির্মাণ করতে পারে এমন মানুষ আজ বিরল। গড়িয়েছে ব্যাপক সময়, বিগত হয়েছে অগণন মানুষ- মানুষের কীর্তি-অকীর্তি; রেখে গেছে ‘শিল্পমোড়কে’ অনেক অনেক ‘সুবিধাবাদ’। ব্যক্তিস্বাধীনতা, অস্তিত্ববাদ, অভিব্যক্তিবাদ-কেন্দ্রিক সভ্যতার বিকাশে মানুষ ক্রমাগত হয়ে পড়েছে আত্মকেন্দ্রিক। গোষ্ঠী কিংবা সম্প্রদায়ভিত্তিক চেতনাবলয় ছেড়ে স্বতন্ত্র-ব্যক্তিনির্ভরতা একদিকে যেমন অর্জন করেছে প্রাতিস্বিকতার স্বীকৃতি, অন্যদিকে হারিয়েছে দলগতভাবে অবস্থানের সুবিধাদি। একসময়, নগরসভ্যতার উদ্ভব-পর্বে কৃষিনির্ভরতা ছেড়ে গাঁয়ের কর্ষণজীবী মানুষ আকর্ষণমুখি জীবনের প্রতি ঝুঁকে, দিয়েছিল আত্মাহুতি- অজান্তেই। অতঃপর আধিপত্যবাদ-আগ্রাসীচিন্তা প্রভৃতির মোহজাল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সচেতন-আধুনিক মানুষ পুনরায় আটকে পড়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা নামক অন্য এক ব্যাধিতে। কবি এক চিরন্তন মানবিক কান্নায় বিনম্র থাকেন। যেনো মাটির ভিতরে সুগোপনে একটি স্বদেশ রেখে, বৃক্ষ রেখে, বীজ রেখে, অদেখা কোনো শিকড়- যার কোনো শিকড়ত্বই নেই, তার জন্য কাঁদেন তিনি। আর বুকের ভিতর দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রাখার প্রত্যয়ে স্থিত থাকেন।



দেশমাতার প্রতি তার প্রাণখোলা আহ্বান, ‘উদিত দুঃখের দেশ, হে কবিতা হে দুধভাত তুমি ফিরে এসো!/... সবুজ দীঘির ঘন শিহরণ? হলুদ শটির বন? রমণীর রোদে/ দেয়া শাড়ি? তুমি কি দ্যাখোনি আমাদের/ আত্মাহুতি দানের যোগ্য কাল! তুমি কি পাওনি টের/ আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া চোখের কোণায় তুমি কি বোঝোনি আমাদের/ হারানোর, সব হারানোর দুঃখ- শোক? তুমি কি শোনোনি ভালোবাসা/ আজও দুঃখ পেয়ে বলে, ভালো আছো হে দুরাশা, হে নীল আশা?’ (উদিত দুঃখের দেশ)



হুমায়ুন আজাদ রাজনীতি সচেতন কবি। রঙিন চশমায় দেখা রাজনীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিলো প্রখর। সুবিধাবাদীতার প্রতিকূলে তার ভাবনার স্রোত প্রবাহিত। তিনি নির্মাণ শান্ত রাজনীতি-প্রবণ রাজ্য আর জীবনব্যবস্থা প্রবর্তন করার পক্ষে; রঙে রঙে সাজাতে চেয়েছেন মানুষের জীবনের অলিগলি। বহুমাত্রিক-প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ বিশেষত পরিচিতি ও খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রাবন্ধিক-ভাষাবিজ্ঞানী-ঔপন্যাসিক হিসেবে। তবে কবিতাচর্চায়ও রয়েছে তার ব্যাপক সাফল্য। চলমান সমাজ পরিপ্রেক্ষিত, রাষ্ট্রনীতি, সভ্যতার বিবর্তন- মূল্যবোধের ব্যাপক বিকৃতি, মানব-প্রবৃত্তি; আর নিজভাবনার উদার-সরল প্রকাশভঙ্গি তার কবিতানির্মিতির ভেতর-কথা। ‘এখন বাঙলাদেশে সব বাঙালিই আপাদমস্তক পঙ্গু’- এই উপলব্ধি মনে লালন করে আটপ্রহর যাতনা অনুভব করেন যে হুমায়ুন আজাদ, তিনি ‘সরষে খেতের হলুদ বন্যার মধ্যে এক বিকেলবেলায়’ সামান্য ভালোলাগার যে অনুভব সন্ধ্যে আসার আগেই বয়ে এনেছিলো বিরোধের বিষ, তার বিভ্রম থেকে বেরুতে না পারার কাতরতায় কাতরাতে কাতরাতে কবি আবর্জনা-অর্থনীতি-পরিচ্ছদ-রক্তনালীতে রঙের গহনপোচ সাজিয়ে তোলেন। জলপাই-এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলেও হুমায়ুন চান পৃথিবী থেকে জলপাইরঙের পোশাক বিদূরিত হোক; কেননা দুনিয়ায় তিনি গড়তে চান ‘রঙিন বেহেশ্ত’। ‘রঙচটা শালিখের পিছে ছুটে ছুটে’ আর কতোদিন পথ-চলা যায়! রঙধনুর আসা-যাওয়া কিংবা চাঁদের রঙকে স্থায়ীভাবে ধরতে চান তিনি; ‘সবুজ ঝোপের নিচে’ পড়ে-থাকা টকটকে লাল ফুলে দেখতে চান নিজের ‘ঠোঁট থেকে খ’সে পড়া রক্তিম চুম্বন’। ‘ভালোলাগার রঙ’ লাগিয়ে চারদিক রঙিন পাপড়িতে ছড়িয়ে দেওয়ার বাসনা বুকে নিয়ে কবি সাজান কথামালা, ‘আমরা দুজনে সমস্ত কামানবন্দুক/ অবহেলা ক’রে ময়লার মতো বয়ে যাওয়া মানুষ আর যানবাহনের/ মধ্যে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধ’রে সুদীর্ঘ চুম্বনে রঙিন ক’রে/ তুলতে পারি সমগ্র বাঙলাকে’।
(সামরিক আইন ভাঙার পাঁচ রকম পদ্ধতি)

বাংলাদেশের জমিতে প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে পথিকের রক্ত; বীজ বুনতে-থাকা কৃষক, শিশু, শিক্ষার্থী, যুবক, রিকশাওয়ালা আর পদ্মানদীর মাঝি অপার নিসর্গে উগড়ে ফেলে রক্তকণা। শাদা বোতলে রাখা লাল রক্ত ঘোলা হতে থাকে দিন দিন; বাড়তে থাকে বেদনার ভার। হুমায়ুনের উপলব্ধি, ‘বাঙলার মাটির মতো ব্লাডব্যাংক আর নেই/ একবিন্দু লাল রক্ত/ দশবিন্দু হয়ে আয় সেই ব্যাংকে রাখার সাথেই’। নারীর কপালে ‘লাল টিপ’ আর ‘একোরিয়ামে পোষা লালা মাছ’ কিংবা বাধা সৃষ্টিকারী সড়কের মাঝে মাঝে দুলতে-থাকা ‘লাল সিগনাল’ যেনো খাবলে খায় গতরের ‘লাল মাংস’; সবদিকে ‘সর্বনাশী লাল’ ভয়ংকর কোলাহলে ‘কোমরে সোনালি সাপ লাল মাছ পদ্মার ইলিশ/ নিবিড় মৌমাছিপুঞ্জ গড়ে মৌচাক’- এদেশের প্রান্তে প্রান্তে, ফসলের খোলা মাঠে, কোটি মানুষের স্বপ্নের সংসারে প্রসারিত দু’টি ‘শীর্ণ লাল’ নিজবাহু দু’চোখে অপলক দেখেন কবি; ভাবেন প্রসন্ন প্রহর আর কতোদূর, ‘আমার দু-বাহু শীর্ণ তবু কারো কারো কাছে সোনালি সুন্দর/ তারা আসে আসবেই/ তারা গলে গলবেই/ ছড়িয়ে দিয়েছি দুই শীর্ণ জীর্ণ লাল বাহু/ রাজপথ কানাগলি ভাঙাচোরা রাস্তায়/ ধরা দাও ধরা দাও যাদের বুকের মধ্যে/ গাঢ় লাল পতাকা উড়ছে। ’
(বাহু)
কবি তার কবিতার মাধ্যমে ভালোবাসা-ঘৃণা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করেন। সৌন্দর্যচেতনা এবং লুকায়িত চৈতন্য জাগিয়ে তুলতে কবিতা শক্তিশালী হাতিয়ারের কাজ করে। কখনও কখনও দার্শনিকতা ছাড়াও কেবল কথার চাতুর্য নিয়ে যারা কবিতার দরোজায় কড়া নাড়েন, তাদের মধ্যে কবি রফিক আজাদ অন্যতম। নন-পোশাকি ফরম্যাটে কবিতা লিখেছেন রফিক। ঔদ্ধত্যপূর্ণ উচ্চারণ রফিক আজাদের কবিতার একটি স্বাভাবিক অনুষঙ্গ।



সমকালে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টিকারী কবিতা ‘ভাত দে হারামজাদা’ প্রকাশিত হয়েছে মানুষের পেট ও মনের যাতনা মোচনের বিকট উচ্চারণ। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে সহসা দুর্ভিক্ষের শিকার হাজার হাজার মানুষের দিশেহারা মনের আকুতির প্রতিচ্ছবি এই কবিতা। কবি লিখছেন, ‘আমার সামান্য দাবি : পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-/ ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠাণ্ডা বা গরম,/ সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ’লে/ কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাই :/ দু’বেলা দু’মুঠো হ’লে ছেড়ে দেবো অন্যসব দাবি। ... ভাত দে হারামজাদা, তা না হ’লে মানচিত্র খাবো। ’



ব্যক্তির পরাজয় থেকে রাষ্টভূমির ক্রমপতনের আখ্যান বর্ণনা করতে গিয়ে রফিক আজাদ নির্মাণ করেছেন স্বাধীনতার স্বাদ ও স্বস্তির বিপরীতে বিপুল বিপন্নতা। মূলত শিল্প-শুভবোধ আর মানবিক মূল্যবোধই যে কবিতার আরাধ্য, স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে রফিক সে কথাই তার পাঠককে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন।

কবিতার সঙ্গে রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা বোধহয় স্পষ্ট এবং স্বীকৃত। দেশ-কালের সঙ্কটে কবিরা সর্বদাই সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকেন। এদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট মানবতাকে বিপর্যস্ত করেছে বারবার। আর তাই সচেতন কবিকেও থাকতে হয়েছে সদা সতর্ক। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এই দাবি অধিকতর তীব্র হওয়ায় কবিদের ওপর যে-গুরুভার অর্পিত হয়েছে তার বোঝা কাঁধে নিতে যে কজন কবি সামনের কাতারে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছেন, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। সত্তরের কবিদের মধ্যে নিঃসন্দেহে রুদ্রের কবিতাই সবচে বেশি উচ্চারিত হয়- কবিতামঞ্চে, পাঠকের কণ্ঠে। রুদ্রর বিশেষত্ব এখানে যে, তিনি খুব দ্রুত জনতার কবি হয়ে উঠতে পেরেছেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে তার কবিতা ছিলো সক্রিয়। কবি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বাদ ও মর্যাদাকে বিপর্যস্ত হতে দেখেছেন। সেই পুরনো শুকুনেরা পুনরায় জাতিসত্তাকে খামছে ছিঁড়ে ফেলতে শুরু করেছে- তা তিনি অনুভব করেন প্রাতিস্বিক বোধে।

তাই রুদ্র লেখেন, ‘আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই। আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি/ ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে। ... ‘রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে,/ সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা/ স্বাধীনতা সে আমার স্বজন হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন/ স্বাধীনতা সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল/ ধর্ষিতা বোনের শাড়ি এ আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা। ’ (বাতাসে লাশের গন্ধ)

কবির এ বোধ বাঙালি জাতিকে এক প্রবল প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়। বাঙালি কি তবে হারাতে বসেছে তার গৌরবের ঐতিহ্য-শক্তির দৃঢ়তা, প্রতিবাদের শক্তি? শুধু কবিতা দিয়ে, কবিতা লিখে সামাজিক-রাষ্ট্রিক-সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা সম্পন্ন করা যায় না। প্রয়োজন ব্যক্তিক সক্রিয়তাও। রুদ্র তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন। আর তাই পঁচাত্তর-পরবর্তী এদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে তাকে তৎপর থাকতে দেখি। মিছিলে, কবিতার মঞ্চে রুদ্রের যাতায়াত ছিলো সুদৃঢ়। কবিতা এবং রাজনৈতিক-ভাবনা সম্পূর্ণ ভিন্ন সত্তা বিবেচনা করেও বলা যায, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এ দু’য়ের এক চমৎকার সমন্বয়, সহাবস্থান তৈরির প্রত্যয়ে স্থিতধী কবিসত্তা। আবৃত্তি-যোগ্যতা রুদ্রের কবিতার অনন্য বৈশিষ্ট্য। কবিতা লেখেন অনেকেই, কবিতা লেখাও হয় প্রচুর। কিন্তু সব কবিতাই আবৃত্তি উপযোগী হয়ে ওঠে না। কবির চেতনসত্তা এবং প্রকাশভঙ্গি এক্ষেত্রে অন্যতম অনুষঙ্গ। রুদ্রের কবিতায় সে স্বাদ আমরা পাই। পৃথিবী, নারী, স্বপ্ন, সংগ্রাম আর শিল্পের প্রতি নিমগ্ন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশের কবিতার আপাদমাথা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি। প্রেম ও সুন্দরের প্রতি তার আকণ্ঠ অনুরাগ। দ্রোহ ও সংগ্রামের প্রতি তার অনড় বিশ্বাস আর শিল্পিত চর্চায় তার কবিতাকে দিয়েছে অনন্য মহিমা; দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য।

কবিতায় স্বাধীনতা কিংবা স্বাধীনতার কবিতা যেভাবেই বলি না কেন, শিল্পিত উচ্চারণ ও বর্ণিল শোভায় বাংলাদেশের কবিতা আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে নিপুণ শক্তিতে। কালের পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের যে মহিমা, তার সামর্থ্য ও সৌন্দর্যকে কবিরা অনুভব করেছেন আপন আপন বোধে ও প্রতিভার আলোয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।