ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একজোড়া কবিতা | আহমেদ ফিরোজ

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
একজোড়া কবিতা | আহমেদ ফিরোজ

হারানো শৈশব
 
দূরে ছায়ার গভীরে
হলদে ফুলেরা যেন রোদ্দুরের মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে আছে,
আর একরত্তি মেয়েটা
গাছের পাতার নীলাভ ছায়ায়, শিমুল আর পলাশগাছের গুঁড়িগুলোর ফাঁকে ফাঁকে
এক-আধবার দেখা যাচ্ছিল
পরের মুহূর্তে আর যায় না
যেন সে জলের ওপর বুদ্বুদ;
মেয়েটার বয়স তিন বছরের বেশি কিছুতেই হবে না
 
এই আছে এই নেই,
হঠাৎ মনে হলো, নানারকম গাছগাছালি মেয়েটাকে আত্মসাৎ করে নিয়েছে;
পোকামাকড়ের গুঞ্জন এবং গাছের পাতা পড়ে প্রায় রুদ্ধ ড্রেনের জল বয়ে যাওয়ার
শিরশির শব্দ ছাড়া চারদিক ভীষণ নিস্তব্ধ;
সেই নিস্তব্ধতার মধ্যে ছোট্ট মেয়েটা যেন হারিয়ে গেছে
 
গাছের পাতার নড়াচড়া-ওড়াওড়ির অস্ফুট ধ্বনি কানে এলো
দূরে বাগানের গাছপালার মধ্যে মেয়েটা
হঠাৎ গজিয়ে ওঠা একটা ছোট্ট গাছের মতো মনে হলো তাকে
লাল গোলাপঝাড় যেখানে প্রাণের স্ফূর্তিতে লতিয়ে উঠছিল
তার কাছেই মেয়েটি
প্রায় আদুল গায়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
 
মেয়েটা কখনও ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে
কখনো-বা ঢেউয়ের মতো ভেসে যাচ্ছে
কখনো গভীর ছায়ার মধ্যে চলে যাচ্ছে
তখন তার গায়ের শাদা রঙের ওপর একটা ক্ষীণ প্রলেপ পড়ছে;
 
এরপর বেশ কিছুটা দূরে বাগানের ভেতরে মেয়েটাকে দেখা গেল
সাঁকোর তলায় জলের মধ্যে সে হেঁটে চলেছে
সাঁকোর ছায়া তার শুভ্র নগ্ন শরীরের ওপর পড়ে
         তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছিল বলে মনে হলো;
কখনওবা সে যেন বাতাসে ভেসে গেল
সাঁকোর ওপর দিয়ে যাবার সময় ডালপালার ফাঁক দিয়ে নেমে আসা
গোল আলোর চাকতি তার শরীরের ওপর খেলা করে গেলো।


 
বিশাল বড় বাগানে একরত্তি ছোট্ট মেয়েটা
ফসফরাসের মতো গভীর নীল দুটো চোখ
ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠল
 
 
বুনো গানের ঝঙ্কার
 
সঙ্গীতের মায়াজাল এতটা মাতাল করেছিল
বুনো গানের ঝঙ্কার প্রকৃতির বুকে আছড়ে-বিছড়ে পড়ছিল
উৎসাহী দর্শক ঝুল-বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপলক
পরিচিত পার্কগুলো ভরে গেলো পিঁপড়ের মতো মানুষের হঠাৎ আনাগোনায়
চায়ের কাপে শব্দের ধ্বনি, হরেক রকম ভাজাপোড়া
পথিকেরা মাতালের ছন্দে দোল খাচ্ছে, যেন নাচের বাদ্যের তাল
 
সন্ধ্যা ক্রমশ ঘনিয়ে আসছিল
সুর ও ছন্দের বৃষ্টি তখনো শেষ হয়নি
সব শক্তি দিয়ে একদল লোক গান করছিল
মুখগুলো বুনো পাগলের চেয়েও নিটোল দেখাচ্ছিল
যেন রক্তবর্ণের গোধূলি ছিঁড়ে যাওয়া ন্যাকড়ার মতো ভাসছে বাতাসে
আর শহরচত্বরে ক্ষ্যাপা মানুষের দল, একেকটা মাতাল...
 
কালের বুকটা ধড়ফড় করতে লাগল
গোপন গভীর বেদনায় বুজে আসছিল তার চোখ
নিজের মানুষদের কাছে মুক্তিপ্রত্যাশীরা ভুল বুঝছে কি এক হারানো জাদুতে?
সবাই সম্বিত ফিরে পাক : আশা করছিল কেউ একজন
কিন্তু ফাটানো চিৎকারে সব আশা ময়লার স্তূপে পড়ে গেলো
উন্মত্ত জনতা, কী সর্বনাশা ভয়ে একসময় তারা দ্রুত সটকে পড়ল
 
অপ্রত্যাশিত এক নৈঃশব্দ চারদিকে নেমে এলো
বিষণ্ণ গাছের ডালে বসে থাকা কাক কা কা করতে করতে উড়ে গেলো
চিন্তার হাজতখানায় আটকে পড়া মানুষেরাও যেন পালাতে শুরু করল
রাষ্ট্র, সংবিধান, গণতন্ত্র সূক্ষ্ম তারের ওপর পড়ে রইল নিঃসঙ্গ
পড়ন্ত সূর্যের আলোতে বুনো ঝঙ্কার পুনশ্চ নায়িকার শরীরে কেঁপে উঠল
মাথা নাড়াতে নাড়াতে একদল লোক হেঁটে যাবার ভঙ্গিতে হেঁচকি তুলল
 
 বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।