ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

অনন্য স্বপ্নদ্রষ্টা ‘জলেশ্বরীর জাদুকর’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
অনন্য স্বপ্নদ্রষ্টা ‘জলেশ্বরীর জাদুকর’ ছবি: রানা/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: খেয়া পার করে দেওয়ার পর ঈশ্বরী পাটুনীকে বর চাইতে বললেন দেবী অন্নদা। দেবীর পদস্পর্শে নৌকা এবং গলুই তখন স্বর্ণে পরিণত হয়েছে।

ইচ্ছে করলেই পাটুনী মূল্যবান রত্নসম্ভার বর চেয়ে নিতে পারতেন দেবী অন্নদার কাছ থেকে। তা না করে পাটুনী চাইলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিশ্চয়তা- ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। ’

মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি ভারতচন্দ্রের সর্বজনবিদিত এই পঙতিটি দিয়েই আপন সাহিত্য জীবনের দার্শনিক ব্যাখ্যা দিলেন ‘জলেশ্বরী’র জাদুকর কবি সৈয়দ শামসুল হক।

সব্যসাচী লেখক অভিধায় অভিষিক্ত বাংলা সাহিত্যের এই মহীরুহ বলেন, একাত্তরের রক্তাক্ত রণতরী পারি দেওয়ার পর আমিও মন্ত্রীত্ব কিংবা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চাইনি। চেয়েছি সমৃদ্ধ অনাগত ভবিষ্যৎ।

যাদের জন্মদিন পালন হয় না, সেসব অগণিত মানুষের কথা বলার চেষ্টা করেছি আমার কাব্যে, উপন্যাসে, নাটকে, গানে। আমার স্বপ্ন এইসব মানুষদের মাঝে সঞ্চারিত করতেই কলম চালিয়েছি। এই দেশ, মানুষ, ভাষা থেকে এই স্বপ্নকে কখনোই যেন কেউ বিচ্যুত করতে না পারে।

সব্যসাচী এই লেখকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে তার বর্ণাঢ্য জীবন ও সৃষ্টিমূল্যায়ণমূলক সম্মাননা সংকলন গ্রন্থ ‘জলেশ্বরীর জাদুকর’র প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে কথাপ্রকাশ।

সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানেই নিজের কর্ম ও মননশীল জীবনের এ অনুভূতি ব্যক্ত করেন সৈয়দ শামসুল হক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক।

লালন সাঁই’র মতো ১১৬ বছর ১৮ দিন বেঁচে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল বলেন, এতদিন যদি নাও বাচিঁ অন্তত ২০২১ সাল পর্যন্ত যেন বেঁচে থাকি। আপনাদের নিয়ে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চাই। যদি সেটাও না হয় তবে যেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারি।

প্রকশানা অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচকেরা বলেন, বাংলা সাহিত্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সৃষ্টিশীল সাহিত্যশিল্পী সৈয়দ হক। পঞ্চাশের দশকে যে ক’জন লেখকের আবির্ভাব ঘটেছিল, তাদের মধ্যে সৈয়দ হকই সাহিত্য অঙ্গণকে সবচেয়ে সার্থক করেছেন। সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে এমন বিরল সাফল্য বিস্ময়কর। সৈয়দ হককে তাই সঙ্গতই ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়ে থাকে।

তিনি সৈয়দ হককে অনন্য স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে আরও বলেন, জলেশ্বরীকে ভিত্তিভূমে রেখে তিনি যেমন তৃণমূলের নিঃস্বর মানুষকে ভাষাময় মূর্ততা দিয়েছেন তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী কথামালা এ জনপদের অবয়বে খুঁজে পেয়েছে সার্থক জায়গা-জমি। জলেশ্বরী কোথাও না থেকে এভাবে হয়ে ওঠে অশ্রুরক্তস্বপ্নময় ভূমি ও জলের বাংলাদেশ।

আর জলেশ্বরীর জাদুকর লেখক সৈয়দ শামসুল হক হয়ে ওঠেন ব্যক্তি থেকে সমষ্টি মানুষের পরাস্ত ও একইসঙ্গে অজেয় উত্থানের অনন্য লিপিকার।

৬৪০ পৃষ্ঠার জলেশ্বরীর জাদুকর সম্মাননা সংকলন গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, লেখক জাকির তালুকদার ও কবি পিয়াস মজিদ। এতে দুই বাংলার ১১০ জন লেখক সৈয়দ হকের বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি ও তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে লিখেছেন।

বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রফিকুন নবী। সম্মাননা সংকলন গ্রন্থটির মূল্য ধরা হয়েছে ১০০০ টাকা।

বর্ণাঢ্য এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সৈয়দ হককে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়। প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচনের পর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কথাপ্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন।

আবৃত্তিকার গোলাম সারওয়ারের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, নাট্যজন আতাউর রহমান, চলচ্চিত্রাকার আমজাদ হোসেন, কথাশিল্পী আনিসুল হক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এমএইচপি/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।