ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | শহীদুল ইসলাম অর্ক

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | শহীদুল ইসলাম অর্ক

পারাপার‬
(কবি সিকদার আমিনুল হককে)

ট্রেনটি অনিবার্যভাবে উপস্থিত হবে তাঁর জন্য, জীর্ণ, পরিত্যক্ত প্লাটফর্মে, সময় হতে না হতেই, তীব্র হুইসেলে সত্তাকে আলোড়িত, সম্মোহিত করবে—এ যেন জানা ছিল। ‘জায়গাটা যথার্থ নির্দয়’—ভেবেও তিনি সমর্পিত হলেন।



ফেরাবার কেউ নেই। তাঁর চোখের জল—গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতার সৌরভ-উন্মাতাল পঙক্তি। আমরা দেখিনি তাঁকে, ভেতরে ভেতরে সাঁজগোজ, খুব দূর যাত্রার মানুষটিকে।

জানতাম না কেউই, ট্রেনটি এত তাড়াতাড়ি, এ অবেলায় উপস্থিত হবে কর্কষভাবে। তাঁকে তুলে দিতে আমরা যাইনি। তিনি একা একাই উঠলেন। শুধু দেখলাম চলন্ত ট্রেনের কামরার জানালায় তাঁর ব্যাকুল মুখ। তিনি রুমালে চোখ মুছে বার বার আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন!


টু বি পেন্সিল

আমার প্রথম প্রেমিকা নিঃসন্দেহে সেই, যাকে হারিয়ে ফেলেই বুঝি, ‘যাতনা কাহারে বলে’!

ঝিঁ ঝিঁ ঘুম রাত্রি এলে মনে পড়ে তার মুখ, কান্নার কয়েনগুলি জমে আর কিছু; সে আমার শৈশবের জমানো আধুলি।

খাতাগুলি একা খুব, বুকভরা কথার সমুদ্রবিহীন, আমারও কষ্ট হয়, যদি দিতে পারতাম কিছু নোনা জল, আহা!

সেই দীর্ঘাঙ্গী কন্যাকে মনে পড়ে আজ, যে হাঁটে ধীরে, লাজুক অবনত মুখশ্রীতে তার শতাব্দীর বিষণ্ণতা! সে আমার প্রথম ভালোবাসা।


‪‎হেমন্তে শীতের পরিকল্পনা‬

হেমন্তেই গ্রামদেশে পৌঁছে যাচ্ছে শীতের বোনাস। মর্নিংওয়াকে দেখি বুথে এভেলএভেল কুয়াশার নোট। শহরতলীর লোকেরা এখনো পায়নি কিছু।

ঘাসের পাতায় শিশির আর হলুদ আলোয় চিঠি লেখা শেষ হলে, প্রতীক্ষায় থাকি। সাইবেরিয়া থেকে আসছে গেস্ট। তার জন্য জমিয়ে রেখেছি জীবনানন্দ দাশের কবিতাসমগ্র।


একটি নিঃসঙ্গ মাউথ অর্গান

পাথুরে হাওয়ায় ওড়ে ধূলিমগ্ন স্মৃতির পালক। হিমায়িত আলোক-দিন যেনবা প্রাগৈতিহাসিক! আর্কাইভে জমানো কিছু সুপার অ্যান্টিক রেকর্ড।

হাতে নিয়ে দেখি আজ বিপ্রতীপ সময়। মাঠে বিষবৃক্ষের চাষ। নিউক্লিয়ার ভাইরাসে মর্গমুখী মানবিক হৃদয়! অষ্টপ্রহর কপি পেস্ট মধ্যযুগ। দৃশ্যগুলি আসে যায় দ্রুত, সিনেমাটিক। ভেসে আসা পালকগুলিকে অলৌকিক, মিথ্যা বলে মনে হয়।

দূরে ক্ষীণস্বরে কাঁদে একা একটি নিঃসঙ্গ মাউথ অর্গান!


প্রেম

অতিথি পাখিরা আসে, দূর ধূসর পথের শেষে, আমাদের ক্যাম্পাসে। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা সাদা সুন্দরী পরীরা নামে কুয়াশার গাঢ় অন্ধকারে।
স্যারদের নিষেধের তর্জনি নিষিদ্ধ পানীয়ের মতো আমাদের তৃষ্ণার্ত করে খুব। ‘পাখি শিকার নিষিদ্ধ’ অঞ্চলে আমরা কয়েকজন খুঁজি দুয়েকটি পালকের উষ্ণতা।

-ঐ লাল ঠোঁট সুন্দরী আমার।
-না না, তোর হতে যাবে ক্যান, ওটা তো আমার।
-দ্যাখ আমার জামার রংয়ের সাথে ওর পালকের রংয়ের মিল। তাই ও আমার, তুই ঐ ধূসরটাকে নিস।
এইসব খুনসুটিতে পার হয় পাড়াতো বিকেল।

সূর্যের প্রস্থানের একটু আগেই, যখন ওরা নেমে আসছিল সাঁই সাঁই শব্দ তুলে জলাভূমির ওপরে, তখন হঠাৎ গুলির শব্দে সচকিত চরাচর। ডানায় রক্ত মেখে পাক খায় লাল ঠোঁট সুন্দরী! আমরা বিস্ময়ে দেখি রাইফেল হাতে প্রলাপ বকে এক ব্যর্থ প্রেমিক। ‘সব শালি প্রতারক, রাক্ষুসীর দল!’



বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।