ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় খণ্ডের ১ম কিস্তি
___________________________________


যত রকমফের রয়েছে তার সব ধরনের অপরাধীদের আনাগোনা এখানে। মাদক ব্যবসায়ী, চোর, জোচ্চর, দস্যু, চোরা-কারবারি, মাতাল, মদ্যপ, বারবনিতা সব। কোনো কোনো মদ্যপ আবার এতটাই সহিংস ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে তাদের দমাতে অন্য কয়েদীরা একজোট হয়।

ষাটের কাছাকাছি বয়স হবে এমন এক বিশালদেহী, থলথলে স্তন, আর মাথা ভর্তি সাদা চুলের জটওয়ালা এক নারীকে অনেকটা চ্যাংদোলা করে, লাথি-গুঁতো দিতে দিতে আর খিস্তি-খেউর করতে করতে প্রকোষ্ঠে ঢোকাল চার কারারক্ষী। বুটসহ দুই পা দুজন মুচড়ে ধরে আছে, তারই মাঝে নারীটি ওদের লাথি দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই ঠিক উইনস্টনের কোলের ওপর ঝপ করে তাকে ফেলল কারারক্ষীরা। প্রচণ্ড চাপে তার রানের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার দশা। নারীটি নিজেকে সোজা করে তুললেন আর চিৎকার করে বললেন, ‘ফা... বাস্টার্ডস!’ তখনই খেয়াল করলেন অস্বাভাবিক কিছুর ওপর বসে আছেন, আর দ্রুতই উইনস্টনের হাঁটুর ওপর থেকে হড়কে গিয়ে বেঞ্চিতে বসলেন।



‘তোমার নাম কী, বলো তো’—বললেন তিনি।
‘স্মিথ’—বলল উইনস্টন।
‘স্মিথ?’ বিস্ময় নারীটির কণ্ঠে। ‘মজার তো। আমার নামও স্মিথ। কেন’—একটু আবেগমাখা উচ্চারণ তার, ‘তাহলে হতে পারে আমি তোমার মা!’



‘মাফ করো, প্রিয়’—বললেন তিনি। ‘আমি তোমার ওপর বসে পড়িনি, ওই জারজগুলো আমাকে তোমার ওপর ফেলেছে। একটা মেয়ে মানুষের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা ওরা জানে না, তুমিই বলো, জানে নাকি?’ একটু থামলেন, বুকের ওপর হালকা চাপড় দিতে দিতে, বড় একটা ঢেঁকুড় তুললেন। ‘মাফ করো, সত্যি বলছি আমি নিজে কিন্তু বসিনি’—ফের বললেন নারীটি।

এরপর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে মেঝেতে হড়হড় করে বমি করে দিলেন।

‘ভালোই হলো’—চোখ বন্ধ করে পেছনে হেলান দিতে দিতে বললেন তিনি। ‘জিনিসটা পেটে পড়লে আর নিচে থাকতে চায় না, ঠিক বের হয়ে আসে। ’

আরেকটু ধাতস্ত হলে ফের উইনস্টনের দিকে তাকালেন আর তার প্রতি যেন একটু আগ্রহীই হয়ে উঠলেন। বিপুল দুটি বাহু তার কাঁধের ওপর ফেলে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন তাকে, মুখের ওপর এসে লাগছে বিয়ার আর বমির গন্ধের ধাক্কা।
‘তোমার নাম কী, বলো তো’—বললেন তিনি।
‘স্মিথ’—বলল উইনস্টন।
‘স্মিথ?’ বিস্ময় নারীটির কণ্ঠে। ‘মজার তো। আমার নামও স্মিথ। কেন’—একটু আবেগমাখা উচ্চারণ তার, ‘তাহলে হতে পারে আমি তোমার মা!’

এই নারী হতেই পারেন তার মা, ভাবল উইনস্টন। বয়স আর শরীরের গঠনে মিলে যায়, আর জবরদস্তি শ্রমের ক্যাম্পে বিশ বছর কাটালে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন তো আসবেই।

আর কেউ অবশ্য তার সঙ্গে কথা বলেনি। বিস্ময়করভাবেই সাধারণ অপরাধীরা দলের কয়েদীদের অবজ্ঞার চোখে দেখে। ‘দ্য পলিটস’ এই নামেই ওরা তাদের ডাকে, যেন তাদের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই। পার্টির কয়েদীরা কারো সঙ্গে কথা বলতে স্রেফ আতঙ্কিত বোধ করে, আর নিজেদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গেও নয়। কেবল একবারই, পার্টির দুই নারী সদস্য ঠেলাঠেলিতে কিছুক্ষণের জন্য পাশাপাশি হয়ে পড়েছিল, তখন সে এই শোরগোলের মধ্যেও শুনতে পেল কিছু শব্দ অতি দ্রুততায় চালাচালি হয়ে গেল। তাদের যা বলতে শোনা গেল তা ছিল অনেকটা এরকম ‘রুম ওয়ান-ওহ-ওয়ান’—যা বস্তুত তার বোধগম্য হলো না।

তৃতীয় খণ্ডের ৩য় কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।