ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আন্দালিব রাশদীর উপন্যাস | কঙ্কাবতীর থার্ড ফ্লোর

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ঈদের বিশেষ আয়োজন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
আন্দালিব রাশদীর উপন্যাস | কঙ্কাবতীর থার্ড ফ্লোর

ভ্যালেন্টিনা
আমাদেরটা কঙ্কাবতী ডি ফোর, মানে থার্ড ফ্লোরের চার নম্বর অ্যাপার্টমেন্ট। থার্ড ফ্লোর মানে চার তলা।

আমাদের আগের বাসাটা, মানে ভাড়া বাসাটা ছিল পাঁচ তলায়, লিফট ছিল না। আমার বড় ফুপু চার তলা পর্যন্ত উঠে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাবাকে এতো উপরে বাসা নেওয়ার জন্য বকাবকি করে নেমে যায়।

বাবা বললো, ছয় তলার কাইয়ুম সাহেবের বড় বোন কেমন করে প্রতিদিন ওঠানামা করেন? তিনি তো বড় আপার চেয়ে কমপক্ষে দশ বছরের বড়।

কঙ্কাবতীতে লিফট আছে, গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে লিফটে উঠলেই শোনা যায়—ওয়েলকাম টু শিন্ডলার লিফট। লিফটের দুপাশে দুটো ফ্যান লাগানো। কঙ্কাবতীতে এসে প্রথম দিনই দেখি লিফট অপারেটর ফ্যানের সাথে দুটো বকুল ফুলের মালা ঝুলিয়ে রেখেছে। ফ্যানের সুইচ অন করলে বকুলের গন্ধে লিফট ভরে ওঠে। সেই লিফট অপারেটরের নাম হোসেন আলী, দেখতে শাহরুখ খানের মতো। আমি হয়তো বাড়িয়েই বলেছি, দেখতে শাহরুখ খানের কাছাকাছি।

লিফটে এতো মিষ্টি গন্ধ তবুও বড় ফুপু আসে না। কারণ বাবা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বড় বোনকে অপমান করেছে! আমি জানি এই অভিযোগ সত্যি। বাবা জেনেশুনে পরিকল্পিতভাবে অপমান করেছে।

ফুপু বলেছিল, জনাব আলীর বউ আমার সোনার ছেলেটাকে বাগাবার জন্য তার ইবলিশ মেয়েগুলোকে লেলিয়ে দিয়েছে। মেয়েগুলোর চরিত্র বলে কিছু নেই, খোঁজ নিয়ে দেখো, একেবারে মায়ের মতোন।

আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলার একটা কারণ অবশ্য আছে। মা কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় বার্ষিক সাংস্কৃতিক রজনীতে শকুন্তলা নাটকের শকুন্তলা সেজেছিল এবং যেয়ো না যেয়ো না বলে দুষ্মন্তকে জড়িয়ে ধরেছিল। ‘পতিচিন্তায় নিমগ্ন’ শকুন্তলা ঋষি দুর্বাসার সেবায় অবহেলা করে। দুর্বাসা তাকে অভিশাপ দেয়। বাবা যখন জেনেশুনে দুষ্মন্তের স্ত্রীকে বিয়ে করলো নতুন বউয়ের চরিত্র নিয়ে যারা কথা তুলেছিল, বড় ফুপু তাদের অন্যতম। পৃথিবীতে মেয়ের কি এতোই আকাল পড়েছে নাকি যে থিয়েটারের মেয়ে বিয়ে করতে হবে। সে সময় যারা নাটকটি দেখেছে বাবাও তাদের একজন। সেটাই আমার মায়ের জীবনের শেষ নাটক।

স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে দু’একটা মন্দ কথা হয়তো সহ্য করা যায়, কিন্তু নিজের মেয়েকে নিয়ে কিছু বললে বাবা একহাত দেখিয়ে দেবে। ফুপু যা বলেছে কথাটা এ কান ও কান ঘুরে বাবার কানেও এসেছে। বাবা তার মেয়েদের বিরুদ্ধে এমন কি সত্য অভিযোগও বিশ্বাস করে না। কাজেই ক্ষিপ্ত বাবা রিকশায় মাইক নিয়ে চড়া গলায় সিনেমার বিজ্ঞাপন প্রচার করার মতো করে সকলকে জানিয়ে জানিয়ে দিয়েছে:
ভাইসব, ভাইসব, এতদ্বারা ডি ফোরের ছেলেমেয়েদের বড় ফুপু গুলশান আরা ওরফে খুকী আর তার হোদল কুতকুতে ছেলে রেশাদকে কঙ্কাবতীতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হইয়াছে। তবে তাহাদের ফুপা কাজী মোসাদ্দর হোসেন ভালো মানুষ, তাহার জমজ কন্যাদ্বয় দিনাত এবং রিনাত জাহানও ভালো বিধায় তাহারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়িবেন না, তাহারা আসিলে ওয়েলকাম করা হইবে। বিনীত ক্রয়সূত্রে ডি ফোরের মালিক জনাব আলী।

সাড়ে সতর শ স্কোয়ার ফিট ফ্লোর স্পেস। ডি ফোর আর ডি টু একই মাপের, কিন্তু ডি ওয়ান আর ডি থ্রি আরো বড়, আঠার শ নব্বই স্কোয়ার ফিট। গোটা বাড়িটা এই মাপেই দশ তলা পর্যন্ত উঠেছে। বেজমেন্টে গ্যারেজ আর গ্রাউন্ড ফ্লোরের অর্ধেকটা গ্যারেজ, বাকিটাতে কঙ্কাবতী আবাসন কল্যাণ সমিতির অফিস আর কমিউনিটি স্পেস—এখানে কুলখানি, মিলাদ এবং আবাসন সমিতির সভা হয়। আর দশ তলার ছাদে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে সমিতির ডিনারের ব্যাবস্থা করা হয়। আমাদের সবার বিয়ে ছাদের উপরই হবে, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করার টাকাটা বেচে যাবে। সবার আগে বড় আপুরটা।

আমাদেরও গ্যারেজ আছে, কিন্তু গাড়ি নেই। গ্যারেজটা দু’হাজার টাকায় ভাড়া দেবার জন্য টু-লেট নোটিশ লাগানো হয়েছিল, একদিনের মধ্যেই ভাড়া হয়ে গেছে।

আমরা আশাবাদী একদিন আমাদেরও গাড়ি হবে।   সি থ্রি-র ইসমাইল আঙ্কল বড় আপুর হাতে তিন মাসের টাকা আগাম দিয়ে গ্যারেজটা  নিয়ে নিয়েছেন। তার নিজের গ্যারেজে সাদা পাজেরোটা তো আছেই, নতুন একটা দামি গাড়ি কিনবেন, সেজন্য আগেভাগে গ্যারেজ ঠিক করে রেখেছেন। তিন মাসেও গাড়ি ঢোকেনি, চার মাসের মাথায় যে গাড়িটা ঢুকলো তার নাম লেক্সাস। কিন্তু এত দামি গাড়ি আমি কোনোদিন গ্যারেজ থেকে বের হতে দেখিনি। যেদিন গাড়িটা দেখলাম সেদিন নিচে খুব হইচই, পুলিশ এসে তালা ভেঙ্গে ধূলিমাখা গাড়ি বের করলো।

চোরাই মাল রাখার অভিযোগে বাবাকে হাতকড়া লাগিয়ে থানায় নেবার জন্য টানাটানি শুরু করতেই বাবা কনস্টেবলের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাতর স্বরে বললো, ভাই একবার জেলে গেলে বড় মেয়েটাকে আর বিয়ে দিতে পারবো না।

ঠিক তখনই ইসমাইল আঙ্কল হাজির, পুলিশকে কিছুক্ষণ বকাবকি করলেন, বললেন, প্রতিমন্ত্রী সাহেবের গাড়ি নিয়ে টানাটানির ফল টের পাবে। যে সেই প্রতিমন্ত্রী নন মন্ত্রীরাও তাকে সমীহ করেন। ইসমাইল আঙ্কল পুলিশদের দু’জনকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর গাড়ি আবার গ্যারেজে ঢুকিয়ে দিয়ে সবাই হাসিমুখে বিদায় নিলেন। দারোয়ানকে বলতে শুনলাম, ইসমাইল স্যার বড় উস্তাদ, সব ম্যানেজ কইরা ফালাইছে। এর নাম ট্যাকার ম্যাজিক।

বাবা বললো, আমি এই চোরাই গাড়ি আর রাখব না। ইট ইজ সিম্পলি ইম্পসিবল। মাসে দশ হাজার টাকা করে দিলেও না।

ইসমাইল আঙ্কল বললেন, সরি বড় ভাই। এখন আর সমস্যা হবে না, পাজেরোটা রাখব আপনার গ্যারেজে আর আমারটাতে থাকবে লেক্সাস। পাজেরোটা জেনুইন, আমার কোম্পানির টাকায় কেনা। লেক্সাসটা সংসদ সদস্য কোটায়, বোঝেনইতো, কিছু দু’নম্বরি আছে, নেভার মাইন্ড বড় ভাই।

এই দু’হাজার টাকায় মার নামে একটা মাসিক ডিপোজিট পেনসন স্কিম খোলা হয়েছে। বাবা মারা গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা পাবে, টাকাটা কাজে লাগবে। বাবা বেঁচে থাকলেও কাজে লাগানো যাবে। বাবার নামে একটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সও আছে, মা নমিনি, বাবা মরলেই কেবল সেটাতে লাভ।

ডি ফোরের সুনাম আছে। সবাই জানে এই ফ্ল্যাটের সব ক’টা বাচ্চা ব্রিলিয়েন্ট। বাচ্চা বললেই শিশু মনে করতে হবে এমন নয়। আমরা দাদুকে বলতে শুনেছি বড় বাচ্চাটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। এ বয়সে কিডনিতে পাথর।

বড় বাচ্চা মানে আমাদের বড় চাচা। বয়স উনসত্তর বছর। উনসত্তর বছর বয়সে পাথর হতে পারবে না এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি?  নিজে এক বছরের বড় হলেই অন্যকে বাচ্চা ভাবা যায়।

ডি ফোরের বড় বাচ্চা মানে বড় আপু—ফিজিক্স ফাইনাল ইয়ার, পরীক্ষা এসে গেছে। লুডমিলা আলী। ইয়ং সায়েন্টিস্টস কনফারেন্স ম্যানিলা থেকে ঘুরে এসেছে। বাবার এক টাকাও লাগেনি। উল্টো বাবার জন্য টাইপিনসহ দুটো লাল টাই নিয়ে এসেছে; ব্যাংককে বারো ঘণ্টার ট্রানজিটে শহর ঘুরে দেখেছে, ফুটপাত থেকে সস্তায় ক্যামেরা ক্যালকুলেটর ও টর্চ কিনেছে; মার জন্য এনেছে ডিপ পেইন মাসকিউলার স্প্রে, আমাদের সবার জন্য এনেছে রামবুথাম নামের অদ্ভুত একটা ফল। নিজে দেখেছে মালকানাঙ প্রাসাদ, রিজাল মনুমেন্ট আর ম্যানিলা ওশেন পার্ক। আর ঘুরে এসেছে বিনোন্দো-পৃথিবীর প্রথম চায়না টাউন। লাল টাই বাবাকে চটিয়ে দিয়েছে; বলেছে, বুড়ো বয়সে আমাকে সং সাজতে হবে নাকি?

আমাদের ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় বাচ্চা ক্যাথরিনা আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজে, ফার্স্ট ইয়ার এখনও শেষ হয়নি। ব্রিলিয়েন্ট না হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পাওয়া যায়? ক্যাথরিনার গান শুনলে বহুক্ষণ সেই সুর কানে বাজে। ক্যাথরিনা গায় লোকগীতি। যে গানটি শোনানোর জন্য তাকে সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করা হয় সেটি হচ্ছে: আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, আমারে কেউ ছইও নাগো সজনী।

তৃতীয়টি ভ্যালেন্টিনা আলী, মানে আমি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি বইপড়া প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হয়ে দামি ল্যাপটপ পেয়েছি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া প্রতিযোগিতায় থার্ড হয়ে পেয়েছি দু’হাজার টাকার বই। আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কেবল এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম। রেজাল্ট ভালোই হবে। আমার আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবার চেয়ে ভালো। বাবা বলবে, তোদের মধ্যে একজন ইঞ্জিনিয়ার  না হলে ফ্যামিলির মানইজ্জত থাকবে? ভ্যালেন্টিনাকে বুয়েটে চান্স পেতে হবে।

বাবা যা বলে বলুক, ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে বই আনতে আনতে এখন মনে হচ্ছে লাইব্রেরিতে আমার বইও তো থাকা দরকার। আসলে আমার রাইটার হওয়া উচিত।

আমার রেজাল্ট যত ভালো হোক তাতে কিছু এসে যায় না। সুতরাং আমার টার্গেট ঠিক করে ফেলেছি, ইংরেজি অনার্স পড়ব। কিন্তু লিখব বাংলা। ইংরেজিতে লিখতে পারব না এমন নয়, একটুখানি দ্বিধা রয়েছে—মনের কথাগুলো যেভাবে বাংলায় লিখতে পারি ইংরেজিতে তা না-ও পারতে পারি। তাছাড়া মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেখানে ইংরেজি ছেড়ে দিয়েছেন, গায়ের জোরে তা আমার ধরে রাখার দরকার নেই। সমস্যা সৃষ্টি করবে মা-বাবা দুজনেই। আমিই ব্যাপারটা কাউকে বুঝতে দেব না। বুয়েট ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় এমন সব উল্টোপাল্টা উত্তর লিখব যাতে এক্জামিনার আমাকে ফেল করাতে বাধ্য হন।

ডি ফোরের চতুর্থ বাচ্চা আলেক্সি পরিবেশ দিবস ও ডাক দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় দুটো প্রথম পুরস্কার বাবদ পাঁচ পাঁচ দশ হাজার টাকা পেয়েছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়ে তিন হাজার টাকার বই পেয়েছে। আলেক্সি এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এখন ঢাকা কলেজে। একটা ব্যাপার বাবা এখনো জানে না। জানানো ঠিক হবে কিনা তাও বুঝতে পারছি না। আলেক্সি মাঝেমধ্যে গাজায় দম দেয়। কেমন করে গাজায় দম দেয় আমার ধারণা নেই। তবে কাজটা যে খারাপ আমি তা নিশ্চিত।

আমাদের আরো একটি বাচ্চা আছে, অনেক ছোট, নাম ইউরি, হা করে থাকে। ক্লাস টু-তে পড়ে। মঝে মাঝে মুখ দিয়ে লালা ঝরে। বাবা বলছে, ক্লাসে যখন ফার্স্ট হচ্ছে কোনো সমস্যাই এমন বড় কিছু নয়।

আমরা সব ওভারকাম করতে পারব। আমি গানটা জানি, কোরাসে গাইলেও আমি ছিলাম লিড সিঙ্গার। ইংরেজিতে যারা কথা বলে, ইংরেজিতে যারা গান গায় তাদের সম্মানই আলাদা।

We shall overcome, we shall overcome,
We shall overcome someday;
Oh, deep in my heart, I do believe,
We shall overcome someday.

গান শুনে বাবা বলেছে, বাহ! বেশতো, আমাদের ভ্যালেন্টিনা ইংরেজি গান গাইতে জানে!

শুরুতে আমাদের মনে হয়েছিল ইউরি অটিস্টিক শিশু নয় তো! লুডমিলা অবশ্য বলেছে ভিন্ন কথা—সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইউরি হা করে বোকাসোকা খোকা সেজে থাকে। নিজের ব্যাপারে সে খুবই সেয়ানা, নতুবা পরীক্ষায় ফার্স্ট হয় কেমন করে। নিজের বেলায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না, মাছের বাটি থেকে ঠিকই বড় পাবদাটা তুলে নেয়।

ক্যাথরিনা মনে করে দ্বিতীয় সন্তানের পর আমার মা-বাবা আর যে দু’একজন সন্তানের জন্ম দিয়েছে তারা এক অর্থে অবৈধ। এতে সরকারি নির্দেশের বরখেলাপ করা হয়েছে। সরকারি বিধান ভেঙ্গে জন্ম দেয়া সন্তান যদি অবৈধ হয়, আমিও সে দলে পড়ে যাই। অবৈধ সন্তান মানে কী? বাস্টার্ড!

তাছাড়া ক্যাথরিনার ভাষায় ইউরি বাবা-মা’র বেশি বয়সের সন্তান। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীই হবার কথা। ইউরি ভাগ্যবান, সমস্যাটা সামান্য, কেবল হা করে থাকে। মাঝে মাঝে ঠোটের কোণ দিয়ে একটুখানি লালা ঝরে।

বাবা বললো, এটা তেমন কিছু নয়, বংশানুক্রমিক, ইউরি নানা সলিমুল্লাহ জোয়ার্দার সাহেবও হা করে থাকতেন। এটা হেরিডিটারি। বংশানুক্রমিক।

ভাগ্য ভালো মা শোনেনি। শুনলে বলত, কক্ষনো না। আমার বাবা হা করে থাকবে কেন? তার কি কোনো অভাব ছিল? অভাবি ছিল ইউরির দাদারা। হাভাতে ফ্যামিলি—সে জন্য তার চৌদ্দগুষ্টি হা করে থাকত।

আমরা বাবা ও মার সাথে আলাদা আলাদাভাবে ফুর্তি করি। দুজনকে কাছাকাছি আসতে দিই না। আমরা জানি কাছাকাছি এলে বড়জোর পাঁচ মিনিট শান্তি বজায় থাকবে, তার পর শুরু হবে লঙ্কাকাণ্ড। শুরু করবে মা-ই। বলবে, তোমার মতো মানুষের সাথে আর একদিনও ঘর করার ইচ্ছে নেই।

তখন বাবা বলবে, ঠিকই বলেছো। তোমার মতো মানুষ আমার সাথে কেমন করে থাকে, তুমি থাকবে রাজা-বাদশাহদের সাথে। যাচ্ছি। আজই তাহলে অফিস থেকে ফেরার পথে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে তালাকের নোটিশটা দিয়ে আসি।
তখন মা বলবে, কী বললে—আমাকে তালাক দেবে? তোমার এত বড় সাহস? ছোট মুখে এত বড় কথা? আজই তোমার জিহ্বা খসে পড়বে।
বাবা বললো, আজই?
ইয়েস, আজই।
বাবাকে অফিস করতে হলে ঘর থেকে বের হতেই হবে। বাবা দরজা খুলতেই মা চেচিয়ে জিজ্ঞেস করল, এখন পালাচ্ছো কেন?
সময় থাকলে বাবা বলত সাবধান শেফালি আর একটা কথা বলেছো তো...
কথা ছিনিয়ে মা বলবে, তো কী করবে, মারবে?
দাঁতমুখ খিচিয়ে বাবা বলবে, না তোমাকে চুমা খাব, অসভ্য মেয়েলোক কোথাকার।
বাবা-মা’র এই ঝগড়াটা আমাদের সবার মুখস্ত। আমরা জানি কোন কথার পর কোন কথা হয়। সবই সিলেবাসের মধ্যে।

পুরোটা পড়ুন বিশেষ আয়োজনে। অপেক্ষায় থাকুন!

** রাফিক হারিরির অনুবাদে | আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা
** হাসান আজিজুল হকের আত্মজীবনী | বসন্তের বাতাসের মতো
** রকিব হাসানের থ্রিলার উপন্যাস | ভোরের জ্যোৎস্না
** মঞ্জু সরকারের উপন্যাস | মরা নদীর ঘাট



বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।