ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

জোড়া বৃষ্টির কবিতা | হিজল জোবায়ের

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫
জোড়া বৃষ্টির কবিতা | হিজল জোবায়ের

নিরর্থক
___________________________________

এ বর্ষায় নীরব সব
নীরব বন বনাঞ্চল
অচঞ্চল ফুলের দিন
বিষাদময় অরণ্যে
 
এ মৌসুম এমন ক্যান্‌
বিকার নাই, নিরর্থক
কোবাল্ট রঙ আকাশটাও
বিরামহীন বিষণ্ণ
 
নদীর জল নীরব সেও
পরাঙ্মুখ কালিন্দী,
পাতার রঙ ক্যামন য্যান্‌
সবুজ ঠিক সবুজ নয়;
অনর্থক গোলকধাম—
কদমফুল, ঝুলন্ত!

জাহাজঘাট, রে ইস্পাত
হৃদয়হীন পাষণ্ড,
অলাত-লাল বারংবার
বারংবার জ্বলন্ত!
আমার মন বিবশ ক্যান্‌?
আগুন জল তফাত নাই,
চেরাই কাঠ করাত কল
যেদিক যাই সেদিকটাই।

বাতাস বয় হতাশ্বাস
উজাড় মেঘ পরন্তু
আলোকরশ্মি সূর্যের
মেঘের কাল থাবায় গুম,
 
শ্মশানময় চিতার ছাই
বাহির ঘর তফাত নাই,
মাথায় জট অসহ্য
 
শরীরটাও নিরর্থক
মেশিন এক, এ কংকাল—
পাথরভার, অসহ্য
 
রে বেঈমান মেশিন আয়
বিকল হই, নে বিগড়াই;
অযৌক্তিক এ শৃঙ্খল
বিলয় চায়, বিনাশ হোক
 
অনর্থক বাঁচার দায়
নিপাত যাক নিপাত হোক
আজন্মের স্মৃতির টান
তফাত যাও তফাত যাও...


বাঘনখ
___________________________________

পুরানো খোয়াওঠা
শ্যাওলাপিচ্ছিল
আমার একা বাড়ি—
এ ঘন বরষায়,
বৃষ্টিপতনের
শব্দ বুকে করে
একাকী ভিজে যায়।



সিঁড়ির ধাপ ভেঙে
উঠানে একা আমি;
শূন্যে মেলে হাত,
নিজেকে মেলে ধরে
অনেক দূর থেকে—
মাটিতে ঝরে পড়া
প্রবল বৃষ্টিতে
ক্রমশ ভিজে উঠি

শূন্যে চোখ বুজে,
ঊর্ধ্বমুখী হয়ে—
শুনছি অবিরাম
বৃষ্টিপতনের
সান্দ্র মুখরতা;

শুনছি তারই সাথে
হারানো কৈশোরে
একটা কুকপাখি
দীর্ঘ কেঁদে কেঁদে
ডাকছে একটানা

এবার ঠিকই আমি
পূর্ব-পুরুষের
হারানো বাঘনখ
সহজে খুঁজে পাব।

আমার ছোটো মেয়ে, সে
স্কুলের জামা গায়ে
কখন স্কুলে গেছে,
সহজে ফিরবে না;
আমার পত্নীও
জানি না কোন্‌খানে,
সেবার বরষায়
হয়ত মরে গেছে;
আর আমি বরষায়
বৃষ্টিপতনের
শব্দ বুকে করে
জাগছি ক্রমাগত।

সন্ধ্যা ধীরে ধীরে
নামছে পৃথিবীতে,
আমিও এই ফাঁকে
আশায় বুক বাঁধি,
বাড়ির পেছনের
যেখানে বাঁশ-ঝাড়
পুরনো শানবাঁধা
সেখানে চলে যাই,
খনিজ খুঁড়ে তোলা
অন্ধকারে একা—
ঊর্ধ্বমুখী আমি,
বিশাল অতিকায়
ডাইনাসোর, তার—
মতন কোনো এক
সরীসৃপ হয়ে
পরিত্যক্ত সে
পুকুরে নেমে পড়ি;
কাদায় গেঁথে গিয়ে
গভীরে পুঁতে রাখা
হারানো বাঘনখ
এবার খুঁজে পাব—
গভীরে যেতে যেতে,

মরণ সন্ধ্যায়—
প্রবল বন্যার
মতন পৃথিবীতে
সময় বয়ে যাবে,
আর আমি উঠব না

সত্য-কল্পনা,
বিভেদ ভুলে যাব,
মানবজন্মের
প্রাপ্ত ইন্দ্রিয়
নিভিয়ে রেখে আমি
অতীন্দ্রিয়তার
মধ্যে মিশে যাব,

বৃষ্টিকণা তারা
বাইরে একটানা
বিষাদ হয়ে ঝরে,
পূর্বসত্যকে
মিথ্যা জেনে আমি
নতুন সত্যের
মধ্যে মিশে যাব

আর আমি উঠব না...



বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।