ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বুনো ফুলের ক্লোজআপ স্টাডি | টোকন ঠাকুর

গুণের জন্মদিনে / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
বুনো ফুলের ক্লোজআপ স্টাডি | টোকন ঠাকুর ছবি: সংগৃহীত

তানিমের কথার অর্থ ছিল, কালই তো কবির জন্মদিন। অনলাইনের জন্যে একটা লেখা দেন।

বললাম, সময় কম। তা ঠিক। বলে, তানিম যা আরো বলল, গুণ দা’র কবিতা নিয়ে তো আর এই শর্ট টাইমে কিছু লেখার সুযোগ নেই, তাই অন্য কিছু যদি দেন।

এসব কথা হচ্ছিল ফোনে। বললাম, অন্য কিছু আবার কী?
গুণ দা’র সঙ্গে তো আপনার মেশামেশি আছে। ভাব-ভালোবাসা আছে, আছে না?
বললাম, আছে। সেসব তো লিখছিও এর আগে।
এইবার তানিম কবির যা বলল, সেটা বলার জন্যেই এই লেখার সূচনায় এমন কথোপকথন ভঙ্গি ধরছি।
তো তানিম কী বলল গুণ দা সম্পর্কে?
তানিম বলল, ব্যক্তিগত মেশামেশির কারণে গুণ দা’র অনেক কিছুই তো জানেন, তার মধ্যে দিলেন কিছু একটা ফাঁস কইরা আর কি...
তানিমকে বললাম, তা না হয় দিলাম। তারপর যখন গুণ দা’র সঙ্গে আমার দেখা হবে, তখন?

আমি যা নিয়ে চিন্তিত, তানিম তা পেতে চেয়ে আনন্দিত। এই হচ্ছে জগৎলীলে। লীলে বোঝা সাধ্য কার! এরপর বাইরে একখান চক্কর দিয়ে এসে, বাসায় ল্যাপটপে বসলাম। গুণ দা’র জন্মদিন উপলক্ষে কিছু একটা ফাঁস করে দেব বলে লিখতিছি।

খ.
কবি নির্মলেন্দু গুণের জীবনযাপন, লেখালেখি, দেখাদেখি কিছু কি আর ফাঁস করার অবশিষ্ট আছে, তানিম? আর আমি কয়দিন পাইছি গুণ দা’কে? এই আড্ডাপ্রিয় তরুণ কবিকে পেয়েছে বাংলা কবিতার পাঠক-পাঠিকা, প্রায় ৫০ বছর ধরে। গুণ দা’ তো মিথ হয়ে গেছেন, তানিম। ইদানীং কবির সঙ্গে দেখা হচ্ছে কম কম। ক’বছর আগে তো প্রায় প্রত্যেক সন্ধ্যায় দেখা হতো হাতিরপুল মোতালেব প্লাজার সামনে। মোতালেব প্লাজার কোণার দিকটায় পরীবাগের দিক থেকে এমন একটা হাওয়া আসে সন্ধ্যায়, আমরা সেই হাওয়া খেতে বসতাম ফুটপাতে। ফুটপাত সরকারি, হাওয়া তো মহাসরকারি। কাজেই আমাদের কোনো বাধা নেই। সে-সব সন্ধ্যার হাওয়া আমাদের কোথায় উড়িয়ে নিয়ে গেছে, রিমান্ডে নিলেও আমি আজ তা পুরেপুরি বলতে পারব না। কবিতার কথা হয়েছে, হয়েছে  দেশকাল-রাজনীতির কথাও। কথা হয়েছে ক্রিকেট নিয়ে যেমন, নারী-প্রেম-যৌনতা নিয়েও।

গ.
গুণ দা’ ছবি তোলেন ক্যামেরায়। অ্যাক্রেলিকে আঁকলেনও ছবি। পাবলিক লাইব্রেরিতে একটা প্রদর্শনীও হলো ক’বছর আগে। আমরা ক্যানভাসের সামনে দাঁড়ানো দেখলাম কবিকে, যখন তিনি চিত্রকর। নারীর ন্যুড ফিগার পটভূমি হয়ে উঠল তার অনেক ক্যানভাসেই। নারী-শরীরের বাঁক-ভঙ্গি দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম আমরা। যেন, এ কী দেখলাম! কবিতা লিখতে গিয়েও যেমন তার কলমের নিভ নারীর স্তনে, নিতম্বে ভ্রমণ করেছে, সেই নিবের সঙ্গে কবিও করেছেন ভ্রমণ। আমরা দেখেছি সেই ভ্রমণ। দেখতে দেখতে, ফিল করতে করতে আমরাও ভ্রমণ ভালোবেসে ফেলেছি। এ জীবন ভ্রমণময়, এখন তো পরিষ্কার বুঝে ফেলাইছি।

ঘ.
বললাম তো, গুণ দা’ তার ক্যামেরায় ছবি তুলে থাকেন। অনেক ফুলের ছবি তোলেন এই কবি। শহরের নার্সারির ফুল, গ্রামের জংলাফুল ইত্যাদি। এবং গুণ দা’ ঢাকায় ফেরার পর, হয়তে এরকমই কোনো আম-জাম-কাঁঠাল-মন-শরীর পেকে ওঠা দিনে, হাঁসফাঁস গরমে দম বন্ধ-বন্ধ অবস্থায়, ওই মোতালেব প্লাজার কোণায় পরীবাগের দিক থেকে আসা হাওয়া খাওয়ার জন্যে যখন দেখা হলো সন্ধ্যায়, গুণ দা’ ডিজিটাল ক্যামেরায় তুলে আনা ছবি দেখাতে থাকেন। একটার পর একটা ছবি। কতরকম ফুলের ছবি। ফুলের কতরকম বাহার। হঠাৎ একটা ছবি দেখাতে গিয়ে গুণ দা’ একটু সতর্ক হলেন, মোতালেব প্লাজার ওই কোণার ফুটপাতে তো তখন লোক গিজগিজে, বললেন, এইটা কী ফুল কও তো!
বললাম, বাংলার বুনো  ফুল বুঝতিছি কিন্তু আমি এর নাম জানি না। এটা তো ফুলের একদম ভেতর থেকে তোলা...বাহ।

ঙ.
আমাদের দুজনের চোখ তখন ক্যামেরার মনিটরের খুব কাছে নিয়ে যাই কারণ ফুলের একেবারে বিপদজনক একটা ক্লোজআপ ধরেছেন কবি। দেখেই অন্য কিছু মনে আসে। সেই বুনো ফুলের পরাগের ভেতর ফোকাস করা ইমেজটা দেখতে একদম কোনো ন্যুড বালিকার ক্লোজআপ যৌনাঙ্গ চোখের সামনে প্রতিভাত হয়, তাৎক্ষণিক একটা স্পার্ক তৈরি হয়। আমারও হলো। ফটোগ্রাফার তখন আমার চোখের দিকে তাকালেন। প্রথমে ইশারা করলেন, এরপর তার ইশারাময় বাক্য, কী?
আমি বললাম, একদম। বিগ ক্লোজ। পেলেন কোথায়?
কবি বললেন, খুঁজতে খুঁজতে, জঙ্গলে।
সেই থেকে ভাবি, ক্লোজআপ ফুলের স্টাডি করতে জঙ্গলেই যাব... ঠিক আছে?



বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।