ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২৮) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২৮) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

২৭তম কিস্তির লিংক
___________________________________

স্রেফ নারী-পুরুষদের এমন একটি নীতির প্রতি অনুগত করে তোলা কিন্তু পার্টির উদ্দেশ্য নয়; বরং প্রকৃত এবং অঘোষিত উদ্দেশ্য হচ্ছে যৌনতার আনন্দটাই বিলীন করে দেয়া। ভালোবাসা নয়, এখানে যৌনকামনাই শত্রু, হোক তা বিবাহভুক্ত কিংবা বহির্ভূত। দলের সদস্যদের মধ্যে বিয়ে হতে হলে এ জন্য গঠিত কমিটির অনুমোদন লাগে। নীতির বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ঘোষণা নেই; তবে পাত্র-পাত্রীকে শারীরিকভাবে আকৃষ্ট মনে হলে বিয়ের অনুমতি মেলে না। বিয়ের একমাত্র স্বীকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে দলের সেবায় শিশুর সংখ্যা বাড়িয়ে চলা। মলদ্বারে সিরিঞ্জ দিয়ে ওষুধ ঢোকানোর মতো একটি বিরক্তিকর কাজ হিসেবেই দেখা হয় যৌনমিলনকে। কথাগুলো সরাসরি হয়তো কোথাও বলা হয় না, কিন্তু দলের সদস্যদের শিশু বয়স থেকেই যৌনতার প্রতি আগ্রহ ঘষে ঘষে মুছে দেওয়া হয়। জুনিয়র এন্টি সেক্স লিগের মতো কিছু সংগঠন রয়েছে যা নারী-পুরুষ উভয়কেই পুরোপুরি কৌমার্যের পথে ধরে রাখতে কাজ করছে। শিশুদের জন্ম হচ্ছে কৃত্রিম পরিনিষেকে (আর্টিফিসিয়াল ইনসেমিনেশন, নিউস্পিকে যাকে বলা হয় আর্টসেম) আর বেড়ে উঠছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে। এটাই, উইনস্টন জানে সবমিলিয়ে হয়তো ঐকান্তিকভাবে কাজটি হচ্ছে না, তবু কোনও না কোনওভাবে এটাই দলের সাধারণ আদর্শ। যৌনতার আগ্রহকে হত্যা করতে চায় দল, অথবা, হতে পারে হত্যা নয়, এর একটা বিকৃত রূপ দিতে চায়, নোংরা করে তুলতে চায়। সে জানে না, কেন এমনটি করা হচ্ছে, তবে মনে হচ্ছে এটাই হওয়া উচিত। আর যখন বিষয়টিতে নারীরা সম্পৃক্ত, দলের এই প্রচেষ্টা যথেষ্ঠই সফল।

আবারও চিন্তাজগতে ক্যাথরিনের প্রবেশ। নয়-দশ বছর হবে, এগারোও হতে পারে তারা আলাদা হয়ে গেছে। কৌতুহলের বিষয়, কদাচই সে তার কথা ভাবে। কখনো দিনের পর দিন সে ভুলেই বসে থাকে যে একদা তার বিয়ে হয়েছিলো। তারা একসঙ্গে ছিলো পনেরো মাসের মতো। দল তালাকের অনুমতি দেয় না, বরং বাচ্চাকাচ্চা না থাকলে আলাদা থাকার বিষয়টিকেই উৎসাহিত করে।
 
ক্যাথরিন লম্বা গড়ণের, সুন্দর চুলের মেয়ে, অসাধারণ ভঙ্গিমা। ঈগলসদৃশ দৃঢ়-বাঁকানো চেহারা, যা দেখলে যে কেহই বলবে ‘দারুণ’, অন্তত যতক্ষণ না তারা বুঝবে এর পেছনটা ফাঁপা। বিবাহিত জীবনের খুব গোড়াতেই সে বুঝে ফেলেছিলোÑ যদিও তুলনা করে দেখার মতো অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গেই তার খুব একটা ঘনিষ্টতা কখনো হয়নিÑ তার পরেও যতজন দেখেছে তার মনে হয়েছে, ব্যত্যয়হীনভাবেই এই মেয়েটি তাদের মধ্যে সবচেয়ে নির্বোধ, ফালতু আর শুণ্যমনা। সেøাগানের বাইরে তার মাথায় ভাবনার কিছু ছিলো না। দলের কথা মনের মধ্যে ধরে রাখতে না পারার মতো এতটা নিবুর্দ্ধিতা আর কারো মধ্যে দেখা যাবে না। মনে মনে সে তার নাম দিয়েছিলো ‘মানব শব্দযন্ত্র’। তারপরেও তার সঙ্গে বসবাস চলতো যদি সহবাসের বিষয়ে তাদের বনিবনা হয়ে যেতো।

তাকে ছুঁলেই কুঁকড়ে শক্ত হয়ে থাকতো। তাকে জড়িয়ে ধরা আর একটি কাঠের পুতুলকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিলো না। আরও অদ্ভুত ছিলো সে যখন তাকে কাছে টানতো, তখন মনে হতো ও যেনো প্রাণপণে তাকে দূরে ঠেলছে। তার শক্ত হয়ে থাকা নির্লিপ্ত পেশিগুলো অন্তত সেই বার্তাই দিতো। না ছিলো প্রতিরোধ, না সহযোগিতা। কেবল চোখ বন্ধ করে নিজেকে সমর্পন করে শুয়ে থাকতো। বিষয়টি ছিলো অস্বাভাবিকভাবেই বিরক্তিকর, আর কিছুক্ষণ পর তা হয়ে উঠতো ভয়াবহ অসহনীয়। তারপরেও মেনে নিয়ে একসঙ্গে থাকা যেতো যদি তারা দুজনই কৌমার্য ধরে রাখার ব্যাপারে একমত হতে পারতো। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ক্যাথরিনই তাতে বাঁধ সাঁধলো। সে বললো, সম্ভব হলে তারা অবশ্যই একটা বাচ্চা নেবে। সুতরাং কাজটি ওভাবেই চললো। একেবারেই অসম্ভব হয়ে না পড়লে সপ্তাহে একদিন, নিয়ম করেই চলতো। সপ্তাহের দিনটি এলেই সকালেই মনে করিয়ে দিতো সন্ধ্যার কাজটির কথা। এ জন্য দুটি কথা ব্যবহার করতো ও- একটি ছিলো ‘সন্তান বানানোর কাজ’ অন্যটি ‘দলের প্রতি দায়িত্ব’ (সত্যিই এই দুটি কথাই সে বলতো)। যখনই নির্দিষ্ট দিনগুলো আসতো উইনস্টনের ভেতর একটি ইতিবাচক শঙ্কার অনুভ’তি কাজ করতো, তবে ভাগ্যক্রমে সন্তান আগমনের খবর মিলতো না। আর অবশেষে দুজনই এই প্রচেষ্টায় ক্ষান্ত দেওয়ার বিষয়ে একমত হলো। আর এর কিছু দিনের মধ্যেই তারা আলাদা হয়ে গেলো।
 
একটা নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস ফেললো উইনস্টন। কলম তুলে নিয়ে ফের লিখতে শুরু করলো:
আচমকা মেয়েটি নিজেকে বিছানায় ছুড়ে ফেললো, কোনো ধরনের পূর্বরাগের প্রস্তুতি ছাড়াই, কল্পনাতীত বিভৎসতায় সে তার স্কার্টটি উপরে তুললো। আমি-

২৯তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৮০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।