ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৮) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৮) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন


১৭তম কিস্তির লিংক

___________________________________

সে খুব সহজেই বক্তব্যটিকে বিশ্বাসঘাতক আর চিন্তা-অপরাধীদের নিন্দাবাদ দিয়ে পাল্টে দিতে পারত কিন্তু তা খুব সাধারণ কিছু হয়ে যাবে। আর কোনও একটি যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ের খবর কিংবা নবম ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনার বড় ধরনের কোনও অর্জনের কথা থাকলে তা আরও জটিল করে তুলবে। আসলে যা দরকার সেটি হচ্ছে খাঁটি মজাদার কিছু একটা বসিয়ে দেওয়া। হঠাৎ করেই তার মনের মধ্যে খেলে গেল এক দারুণ চিন্তা। রেডিমেড, খাটুনি নেই, স্রেফ একটি ছবি বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আর সে ছবিটি হবে নিঃসন্দেহে কমরেড অগিলভির, দিন কয়েক আগে যুদ্ধক্ষেত্রে তার বীরের মৃত্যু হয়েছে। কোনও কোনও দিন বিগ ব্রাদার তার দিনের নির্দেশে দলের কোনও এক অনুগত, উচ্চপদস্থ সদস্যের কথা স্মরণ করেন যার জীবন কিংবা মৃত্যুর ঘটনাকে তিনি অনুসরণীয় বলে তুলে ধরেন। আর ওই দিনটিতে তিনি কমরেড অগিলভিকে স্মরণ করেছেন সে তো হতেই পারে। এটা সত্য কমরেড অগিলভি নামে কেউ কখনও ছিল না, তবে ছাপার অক্ষরে কয়েকটি লাইন আর মিথ্যা ছবিতে তার অস্তিত্ব নিশ্চয়ই ফুটে উঠবে।

উইনস্টন এক মুহূর্ত চিন্তা করে নিল, নিজের দিকে স্পিকরাইট যন্ত্রটি টেনে নিয়ে বিগ ব্রাদারের পরিচিত ভঙ্গিমায় উচ্চারণ করতে লাগল; যে উচ্চারণ একই সঙ্গে সামরিক ও পদধারীর মিশ্রিত রূপ। নিজেই প্রশ্ন করা আবার নিজেই তার উত্তর দেওয়া (তাহলে কমরেডরা এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিলাম? আমরা শিখলাম—যা আসলে ইংসকের মৌলিক নীতিরও একটি—আর তা হচ্ছে.. ইত্যাদি, ইত্যাদি) যা নকল করা খুব সহজ।

কমরেড অগিলভির বয়স যখন তিন তখন একটি সাব-মেশিনগান, একটি মডেল হেলিকপ্টার আর ড্রাম ছাড়া সব খেলনাই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ছয় বছরে, রীতি শিথিল করে নির্ধারিত বয়সের এক সন আগেই তাকে নেওয়া হয় গুপ্তচরবৃত্তিতে। আর নয় বছরে তাকে একটি গুপ্তচরদলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১১ বছর বয়সে নিজের চাচাকে, কিছু কথাবার্তা শুনে ফেলে অপরাধী প্রবৃত্তির বলে মনে হওয়ায়, থট পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। ১৭ বছরে জুনিয়র অ্যান্টি-সেক্স লিগের জেলা সংগঠক হয় অগিলভি। ১৯ বছরে সে একটি হাত গ্রেনেড বানায় যা শান্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়, আর প্রথম পরীক্ষামূলক ব্যবহারে ওই গ্রেনেডের এক বিস্ফোরণেই ইউরেশীয় কারাবন্দীদের একত্রিশজন নিহত হয়। ২৩ বছরে কর্মরত অবস্থায় তার জীবনাবসান ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সংবাদ নিয়ে ভারত সাগরের ওপর দিয়ে যখন উড়ে যাচ্ছিলেন তখন শত্রুপক্ষের জেট বিমান তার পিছু নেয়, শরীরে মেশিনগানের ওজন বেঁধে হেলিকপ্টার থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো নিয়েই ঝাপিয়ে পড়ে গভীর পানিতে তলিয়ে যান। সঙ্গে ডুবে যায় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের নথিপত্রসহ সব কিছু—আর সেখানেই সব শেষ—বলেন বিগ ব্রাদার। ইর্ষণীয় এক আত্মত্যাগ—বলেন তিনি। সঙ্গে বিগ ব্রাদার আরও কিছু মন্তব্য যোগ করেন যাতে ফুটে ওঠে কমরেড অগিলভির জীবনের খাঁটি ও দৃঢ়তার দিকগুলো। তিনি ছিলেন পুরোপুরি মদ্যপানপরিহারকারী ও অধূমপায়ী ব্যক্তি, দিনে একবার ঘণ্টাখানেক ব্যায়ামাগারে কাটানোর বাইরে তার বিনোদন বলতে আর কিছু ছিল না, কৌমার্যের প্রতি তার ছিল আনুগত্য, বিয়েতে বিশ্বাস আর পরিবারের সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনে থেকে কাজের প্রতি দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টার আত্মনিয়োজন সম্ভব নয়। তার কথাবার্তায় ইংসকের নীতি ব্যতিরেকে আর কোনও বিষয় থাকত না, ইউরেশীয় শত্রুদের দমন করা ছাড়া আর তাদের গুপ্তচরদের, বিশ্বাসঘাতকদের, চিন্তা-অপরাধীদের আর যড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করা ছাড়া জীবনে আর কোনও লক্ষ ছিল না তাঁর।

কমরেড অগিলভিকে অর্ডার অব কন্সপিশাস মেরিট পদকে ভূষিত করা হবে কি না সে নিয়ে নিজের সঙ্গে নিজেই বিতর্ক করে নিল উইনস্টন। আর শেষে না করারই সিদ্ধান্ত নিল কারণ ওতে খামোখা কিছু বাড়তি তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে।

উল্টোদিকের কুঠুরিতে বসা প্রতিপক্ষের দিকে আরও একবার দৃষ্টি হানলো উইনস্টন। কিছু একটা কারণে তার মনে হচ্ছে টিলোটসনও একই কাজে ব্যস্ত যা সে নিজেও করছে। কোনও পথই নেই কার কাজটি শেষ পর্যন্ত গৃহীত হবে তা জানার। তবে একটা দৃঢ় আস্থাবোধ তার মধ্যে কাজ করছে যে, তার লেখাটিই নেওয়া হবে। কমরেড অগিলভি, ঘণ্টাখানেক আগে যা কল্পনায়ও ছিল না, তা এখন এক বাস্তবতা। তার কৌতূহলে আঘাত হানলো আরেক ভাবনা, আপনি চাইলে একটি মৃত মানুষ সৃষ্টি করতে পারবেন, তবে জীবিত নয়। কমরেড অগিলভি, যার অস্তিত্বের কোনও বর্তমান কোনও কালে ছিল না, এখন অতীতে তার অস্তিত্ব আছে। আর যখন এই জালিয়াতির সব কিছু সবাই ভুলে যাবে, তখন তার অস্তিত্ব এই প্রমাণের ভিত্তিতেই কার্লোস ম্যাগনাস বা জুলিয়াস সিজারের মতই বাস্তব হয়ে উঠবে।

১৯তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।