ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

খাসিয়াপুঞ্জিতে চাষ হচ্ছে ‘মসলার রাজা’ গোল মরিচ   

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
খাসিয়াপুঞ্জিতে চাষ হচ্ছে ‘মসলার রাজা’ গোল মরিচ
  

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জিতে চাষ হচ্ছে ‘মসলার রাজা’ হিসেবে খ্যাত গোল মরিচ। এ পাহাড়ি অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিকভাবে গোল মরিচ চাষের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।


 
খাসিয়া ৩০টি পরিবার পুঞ্জির ৩০ একর জমিতে গোল মরিচ চাষ করেছে। এখানে গাছ রয়েছে প্রায় তিন হাজারটি। লতা জাতীয় গোল মরিচ গাছ দেখতে অনেকটা পান গাছের মতো। এ গাছ লম্বা অন্য কোনো গাছ বা কোনো কিছু অবলম্বন করে বেড়ে ওঠে। একটি গাছ পূর্ণতা পায় সাত বছরে। ফল দিতে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। ফল ধরে আঙুরের মতো থোকায় থোকায়।
 
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, মার্চ মাস থেকে গোল মরিচের ফুল আসতে শুরু হয়। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফল ধরতে শুরু করে। পুরো জানুয়ারি মাস জুড়ে মরিচ উৎপাদন হয়। গেল মৌসুমে খাসিয়াপুঞ্জি থেকে দেড় হাজার কেজি গোল মরিচ বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ৪০০ টাকা। এখানকার চাষিরা শ্রীমঙ্গলের আড়তে নিয়ে পাইকারি দরে গোল মরিচ বিক্রি করে থাকেন। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে আধা কেজি পর্যন্ত গোল মরিচ উৎপাদন হয়। ফল ধরার সময় পাকার আগ পর্যন্ত সবুজ বর্ণের থাকে। লাল রঙ ধারণ করার পর গোল মরিচ গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

গোল মরিচ চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। শুধু গাছ লাগানোর পর নিয়মিত পরিচর্চা করতে হয়। এতে পোকা আক্রমণ করে কম। মাঝে মধ্যে রোগবালাই দেখা দিলে কৃষি বিভাগ তাদের সহযোগিতা করে।

খাসিয়াপুঞ্জির মন্ত্রী (খাসিয়াপুঞ্জির প্রধানকে মন্ত্রী বলা হয়) উদিয়ান টং কেয়ার বাংলানিউজকে জানান, তিনি এক হাজার গাছ রোপণ করেছিলেন। বর্তমানে তার গাছগুলোর বয়স ১৫ বছর। গেল মৌসুমে তিনি ৫০০ কেজি গোল মরিচ বিক্রি করেছেন। আয় হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। খরচ তেমন একটা হয়নি।

গোল মরিচ চাষি বতন খাসিয়া জানান, পুঞ্জিতে তার ১০০ গাছ রয়েছে। এখান থেকে নিজের খাবারের জন্য রেখেও বছরে ৫০ কেজি বিক্রি করতে পারেন। তিনি আরও গাছ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

এ উপজেলার সাবেক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিকে খাসিয়াপুঞ্জিতে হাতেগোনা কয়েকটি গাছ ছিল। পরে সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় আমাদের সহযোগিতা নিয়ে সেখানকার বাসিন্দারা চাষ বাড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে গোল মরিচ চাষ আরও বাড়বে।

বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ের আবহাওয়া গোল মরিচ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে বাণিজ্যিকভাবে গোল মরিচ চাষের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
 
তিনি আরও জানান, গোল মরিচে অনেক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। গোটা বা গুঁড়া- দুইভাবেই গোল মরিচ খাওয়া যায়। খাবারে এক চিমটি গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে স্বাদ অনেকটা বেড়ে যায়। গনোরিয়া, পেট ফাঁপা, জ্বর, সর্দি, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তাল্পতা, ক্ষুধামন্দা, দাঁতের রোগ, ডায়রিয়া ও হৃদ্রোগেও উপকারী গোলমরিচ। গোল মরিচ হজমে সাহায্য করে।

এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ যেমন- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম এবং ভিটামিন পাওয়া যায়। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, ডায়াটারি ফাইবার এবং সহনীয় পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিনও।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।