ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

লন কার্পেট ঘাস চাষে স্বপ্নপূরণ রাব্বীর

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২
লন কার্পেট ঘাস চাষে স্বপ্নপূরণ রাব্বীর কার্পেট ঘাস তুলেছেন শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁদপুর: গোলাম রাব্বী বাহারাইনে ছিলেন প্রায় সাত বছর। সেখানে কাজ করেছেন লন কার্পেট ঘাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে।

তখন থেকেই পরিকল্পনা করেন দেশে এসে তিনিও এই ঘাষ চাষ করবেন। ২০২০ সালে দেশে ফিরে আসেন চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকার ওই যুবক।  

২০২১ সালে সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জাফরাবাদ এলাকায় ৪০ শতাংশ পতিত জমি ইজারা নিয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে লন কার্পেট ঘাস চাষ শুরু করেন রাব্বী।  দুই বছরের মধ্যেই তার প্রকল্পে আস্তে আস্তে সফলতা আসতে শুরু করে। এখন পাঁচ একর জমিতে লন কার্পেট ঘাসের চাষ করেছেন তিনি। তার জন্য কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ জনের। একই সঙ্গে রাব্বীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। সরেজমিন পশ্চিম জাফরাবাদ এলাকার দুটি পতিত জমিতে চাষ করা ঘাসের পরিচর্যা করতে দেখা গেল শ্রমিকদের। ওই শ্রমিকরা স্থানীয় বাসিন্দা। রাব্বীর এই ঘাস চাষের প্রকল্প শুরু করার পর থেকে তারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে তারা ঘাস লাগানো থেকে শুরু করে যত্ন নেওয়া, বড় হলে কেটে বিক্রি করা ইত্যাদি কাজ বুঝে নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার এই দুটি জমি পতিত ছিল। রাব্বী এসে ইজরা নিয়ে ঘাস চাষ শুরু করেন। কয়েকবার বিক্রিও করেছেন। তার ওখানে আমাদের এলাকার অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঘাসের পরিচর্যা করেন শ্রমিক মো. মোশারফ ও আব্দুর রহমান। তারা বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত আমাদের এলাকায় কেউ এভাবে ঘাস চাষ করে না। রাব্বীর এই উদ্যোগে প্রথম। পতিত জমিতে প্রথমে বালুভর্তি করে একটি স্তর করা হয়। এরপর আরেকটি স্তরে মাটি। মাটির ওপরে পলিথিন বিছিয়ে ঘাস লাগানো হয়। গরমের সময় ঘাসগুলো বিক্রির উপযোগী হতে তিন মাস সময় লাগে। আর শীতের সময় ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। আমরা নিয়মিত এসব ঘাসের পরিচর্যা করি। আস্তে আস্তে কার্পেট ঘাসের চাহিদা বাড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ঘাস আবাদ করে বিক্রি করা যায় আমরা জানতাম না। রাব্বীর এই উদ্যোগ দেখে ভালো লাগছে। কারণ এই জমিগুলো অনাবাদী পড়েছিল। এখন পরিবেশটা খুব সুন্দর হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসছে ঘাস কেনার জন্য। এলাকার অনেক বেকার মানুষের কাজেরও ব্যবস্থা হয়েছে।

প্রবাস ফেরত তরুণ উদ্যোক্তা গোলাম রাব্বী বাংলানিউজকে বলেন, আমি বাহারাইনে থাকা অবস্থায় দীর্ঘ ৭ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি। সেখানে এই লন কার্পেট ঘাসের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। ওই দেশে থাকা অবস্থায় আমার স্বপ্ন ছিল দেশে এই ঘাস চাষ করা যায় কিনা। ২০২১ সালের শুরুতে ভারত থেকে লন কার্পেট ঘাসের বীজ এনে চাষ শুরু করি। এখন আর বীজ লাগে না। একটি জমি থেকে নিয়ে অন্য জমিতে ঘাস লাগাচ্ছি। এখন পাঁচ একর জমিতে ঘাস আবাদ আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও ১৫ একর জমিতে আবাদ শুরু হবে। এখন প্রায় ৩৫-৪০ শ্রমিক কাজ করছেন। ঘাসের আবাদ বাড়লে আরও লোকজনের কর্মসংস্থান বাড়বে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বর্গফুট ঘাস তিনি এখন বিক্রি করছেন ১শ থেকে ১১০ টাকায়।  Green ঘাস.com.bd ও  Landscaping.com নামে দুটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে লোকজন কার্পেট ঘাস বিক্রির জন্য যোগাযোগ করেন। বাড়ি ও অফিসের আঙিনার সৌন্দর্য বাড়াতে এই কার্পেট ঘাসের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে ঘাস বিক্রি করে এবং শ্রমিকদের বেতন দিয়ে প্রতি মাসে লাখ টাকার মতো লাভ হয়।

প্রকল্প বড় হলে আরও লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রাব্বী বলেন, লন কার্পেট ঘাস চাষ করার জন্য জমি পাওয়াটাই এখন বড় ধরনের সমস্যা। সরকারের খাস ও পতিত জমিগুলো এই ধরনের ঘাস আবাদের জন্য লিজ দেওয়া হলে অনেকেই বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে আসবেন। আমার সঙ্গে যদি কোনো বেকার যুবক এ কাজ করার জন্য পরামর্শ চান, আমি সার্বিক সহযোগিতা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।