ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

টক-মিষ্টি পুষ্টিকর ‘তুঁত ফল’

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
টক-মিষ্টি পুষ্টিকর ‘তুঁত ফল’

ময়মনসিংহ: দেশে রেশম শিল্পের বেহাল দশা। আর এ রেশম শিল্পের মূল উৎস তুঁত গাছ।

এ গাছ পাতা ঝরা প্রকৃতির ছোট ধরনের বৃক্ষ।  

পাতা ডিম্বাকার, খসখসে, পাতার প্রান্তভাগ করাতের মত খাঁজ কাটা এবং অগ্রভাগ সূঁচাল। মূলত পাতার জন্য আমাদের দেশে এ গাছ চাষ হলেও এ গাছের ফল বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। দেখতেও বেশ দৃষ্টিনন্দন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো ফল মিলে তৈরি হয় এক থোকা ফল, যা বেরি জাতীয় এক ধরনের ফল।  

কাঁচা তুঁত ফলের রঙ সবুজ। তবে পাকলে টকটকে লাল ও সম্পূর্ণ পাকলে গাড় বেগুনি বা কালচে রঙ হয়ে যায়। এ ফল খেতে টক-মিষ্টি ও রসালো। আর এর রস থেকে তৈরি করা যায় জ্যাম, জেলি ও পানীয়। দেশের প্রায় ৩৮টি জেলায় তুঁত গাছের চাষ থাকলেও এ ফলের তেমন একটা কদর নেই। কিন্তু বাণিজ্যিক চাষে তুঁত ফল হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থকরী ফসল।

এমনটাই জানিয়েছেন ময়মনসিংহের একাধিক তুঁত চাষি। তাদের ভাষ্য, তুঁত ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হলে, এটি হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় আর্থিক খাতের একটি উৎস। কারণ এ ফলের তৈরি জ্যাম, জেলির কদর রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

সেই সঙ্গে এ ফলের রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁত ফল বেশ উপকারী। এছাড়াও পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস দাহনাশক, বায়ু ও পিত্তনাশক, জ্বরনাশক ও কফনাশক।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শহরতলী শম্ভূগঞ্জ এলাকায় প্রায় দুই যুগ ধরে চাষ হয় তুঁত গাছ। আর প্রায় এক যুগ ধরে এ তুঁত বাগানের দায়িত্বে রয়েছেন ইনচার্জ আব্দুর রহমান।  

তিনি জানান, রেশম পোকা তুঁত গাছের পাতা খায়। ব্র্যাক এসআরসি শম্ভুগঞ্জ শাখার অধীনে প্রায় এক একর ৩০ শতাংশ জমিতে রেশম পোকার খাবার তৈরির জন্য চাষ করা হচ্ছে তুঁত গাছ। তবে তুঁত গাছে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল ধরলেও এ ফলের কোনো ব্যবহার নেই। স্থানীয়রা এমনিতেই নিয়ে নিয়ে এ ফল খান। বিক্রি করা হয় না।

তিনি জানান, বর্তমানে ঐতিহ্য হিসেবে রেশম চাষ হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে তুঁতের ফল প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। কারণ এ ফলের তৈরী জ্যাম, জেলি ও স্কোয়াশ বেশ বিখ্যাত।  

সূত্র মতে, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ ছাড়াও তুঁত চাষ হয় জেলার ত্রিশাল ও গৌরীপুর উপজেলায়। আগে সরকারি সড়কের পাশে তুঁত গাছ লাগানো হলেও এখন সেগুলো আর নেই। বর্তমানে এর কদর তেমন একটা না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চাষি নিজ জমিতেই তুঁত চাষ করে থাকেন।  

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, তুঁত গাছে প্রচুর ফুল আসে সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এবং এর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিলে। বাংলাদেশে পাতার জন্য তুঁত চাষ হলেও আফগানিস্তান এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে ফলের জন্য তুঁত চাষ করা হয়।  

সূত্র মতে, তুঁত ফলের ইংরেজি নাম Mulberry (মালবেরি)। এর দুই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম Morus nigra এবং Morus rubra। আগে মার্চ মাসের শুরুতে ভরা মৌসুমে দেশের রাজশাহী জেলায় কিছু ফল বেচাকেনা হতো। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত কয়েক বছর ধরে এ ফল বেচাকেনা হয় না। তুঁত ফল সাধারণত সীমিত পরিসরে দেশের বাজারে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

তুঁত চাষি, কৃষি বিভাগ ও বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মালবেরি ফল বা তুঁত ফল চাষিদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের যোগান দেয়। কারণ হাজার হাজার তুঁত চাষি তুঁত গাছ বা বাগান থেকে রেশম চাষিদের কাছে তুঁত পাতা বিক্রি করে আয় করে থাকেন। পাশাপাশি ফলও বিক্রি করতে পারলে তারা আরও লাভবান হবেন।  

একাধিক চাষি জানান, দেশে সাধারণত শাখা কলম বা শীতকালে ছাঁটাই করা ডাল মাটিতে পুঁতে তুঁতের নতুন গাছ পাওয়া যায়। তবে বীজ দিয়েও চারা তৈরি করা যায়।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেশম বোর্ডের আঞ্চলিক রেশম প্রতিপাদক মো. জহিরুল হক বলেন, দেশে মূলত পাতার জন্যই তুঁত চাষ হয়। তবে এর ফল বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। বাণিজ্যিক চাষে এ ফলের ব্যবহার হলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।