ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ভারত থেকে আর পাট বীজ আনবো না: কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২২
ভারত থেকে আর পাট বীজ আনবো না: কৃষিমন্ত্রী

ঢাকা: আগামী তিন বছর পর ভারত থেকে আমরা পাট বীজ আনবো না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, আমরা পাট বীজ নিজেরা উৎপাদন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার রোডম্যাপ করেছি।

পাশ্ববর্তী দেশসহ অন্য কোনো দেশের ওপরে আমরা নির্ভরশীল থাকবো না। একই সঙ্গে পাট জাতীয় সব পণ্যে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

রোববার (০৬ মার্চ) দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম। এ বছর পাট দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘সোনালী আঁশের সোনার দেশ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ। ’

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে। এ প্রণোদনা শাক, সবজি, ফল রপ্তানি করে রপ্তানিকারকরা পান। কিন্তু একটি সমস্যা হয়েছে পাট খাতে একটি টায়ার করা হয়েছে সেখানে সাড়ে ৭, ১২ ও ২০ শতাংশ এভাবে পেয়ে থাকে। সবাই ২০ শতাংশ পায় না। আমি পাটমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাকে সহযোগিতা করবো।  

তিনি বলেন, কৃষি পাট মন্ত্রণালয় ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করি এবং প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা করে পাট শিল্পকে কীভাবে আরও উৎসাহিত করা যায়। দেশের পাট শিল্পের যে সম্ভাবনা রয়েছে, যেটা কাজে লাগাতে পারি। একই সঙ্গে এখাতে বিপ্লব ঘটিয়ে ভারতের সঙ্গে যে প্রতিযোগিতা সেটা মোকাবিলা করে আমাদের শ্রেষ্ঠ সোনালী আঁশ পুনরুদ্ধার করতে পারি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে যাতে আমরা টিকে থাকতে পারি। সেধরনের একটি কর্মসূচি আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আগে জমিতেই পাট বীজ হতো। এখন ভারত শীত মৌসুমে কিছু বীজ উৎপাদন করে রপ্তানি করে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের বিজ্ঞানীরা ভারতের জাতের চেয়ে উন্নত জাতের বীজ আবিষ্কার করেছে। চাষিদের কাছে যাচ্ছে। এ বীজের উৎপাদনশীলতা ও আঁশ ভালো। আশা করছি আগামী তিন বছর পরে ভারত থেকে আমরা পাট বীজ আনবো না। আমরা রোড ম্যাপ করেছি পাট ও পেঁয়াজের বীজ নিজেরা উৎপাদন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায়। এটা করা সম্ভব ইনশাল্লাহ আমরা কর্মসূচি নিয়েছি, রোডম্যাপ করেছি আগামী ৩, ৪, ৫ বছরের মধ্যে এই ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। পাশ্ববর্তী দেশসহ অন্য কোনো দেশের ওপরে আমরা নির্ভরশীল থাকবো না।

পাটের উৎপাদন ভারত থেকে বাড়াতে হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এমন জাত আনতে হবে যেটার উৎপাদনশীলতা বেশি। এজন্য পাটের বীজ ভারত থেকে আসে। আমাদের দেশে বীজ গ্রহণযোগ্য না। আমরা চেষ্টা করে পারছি না। দ্বিতীয়ত শিল্পের সঙ্গে জড়িতের মানসম্মত পণ্য তৈরিসহ বহুমুখীকরণ করে প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্যের দাম কমাতে হবে। এমন পণ্য উৎপাদন করতে হবে যেটা প্লাস্টিকের সঙ্গে টিকে থাকতে পারে। পাটকে ধান, সবজির মতো টিকে থাকতে হবে। এজন্য পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি ও পাট মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি আমরা যদি পাটের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারি তাহলে সামনের দিন আরও কঠিন হবে। দাম বাড়তেই থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের কিছু সফলতা রয়েছে। আমাদের পাট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

প্লাস্টিককে নিরুৎসাহিত করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতে কীভাবে নদী নালা সমুদ্রের তলদেশ প্লাস্টিকে ভরে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীর নেতা, সরকার প্রধান, সুশীল সমাজের নেতারা চিৎকার করছে প্লাস্টিকের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যা মানবজাতির জন্য বিরাট হুমকির। এ প্লাস্টিকের স্থানে আমরা পাটজাত পণ্য দিতে পারি। যে চেতনার সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে বিভিন্ন পণ্য আবিষ্কার করে। সেক্ষেত্রে পাটের সম্ভাবনা অসীম। এজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে আমাদের সেখানে টিকে থাকতে হবে।  

তিনি বলেন, প্লাস্টিকের কথা বললাম চেতনার সৃষ্টি হয়েছে। আজকের এ অনুষ্ঠানে ফুল ব্যবহার হয়েছে প্লাস্টিকের। আমরা কেন প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করছি। দেশের চাষিরা ফুল উৎপাদন করছে। অথচ তারা দাম পায় না। আমরা বলছি পরিবেশ রক্ষা করবো। অথচ পাট মন্ত্রণালয়ই প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করছে। প্লাস্টিক বন্ধ করতে পারবো না। ট্যাক্স বাড়িয়ে দাম বাড়িয়ে দিতে পারবো। ব্যবহার কমাতে পারবো। এতে দেশের চাষিরা উৎসাহিত হবে। আমি চেষ্টা করবো এ বিষয়ে কোনো আইন করা যায় কিনা এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এটা তোলা যায় কিনা। প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। তবে এটাকে নিরুৎসাহিত করা যাবে৷ 

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২২
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।