ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘কসম কেটে’ বেশি দামে ভর্তুকির সার নিচ্ছেন কৃষকরা!

এ.কে.এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
‘কসম কেটে’ বেশি দামে ভর্তুকির সার নিচ্ছেন কৃষকরা!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সিন্ডিকেটের কারণে ভর্তুকির সার বিক্রিতে নৈরাজ্য চলছে। কৃষকদের ‘কসম খাইয়ে’ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সার।

উপজেলা প্রশাসনের জরিমানা ও কঠোর নজরদারির পরও থামছে না এই নৈরাজ্য।  

জানা যায়, ডিএপি এক বস্তা ৫০ কেজির সারের সরকারি মূল্য ৮০০ টাকা হলেও নাচোলে কৃষক কিনছেন ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায়। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকালে  উপজেলার মাক্তাপুর গ্রামের কৃষক এরফান আলীর ছেলে মজিদুল সার ডিলার দবির ট্রেডার্সের দোকানে ডিএপি সার কেনার জন্য গেলে দবির জানায় সার নাই। পরে ওই কৃষককে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে শপথ করিয়ে বলেন, সারের দাম নিবো ৯৫০ টাকা, তবে এ কথা কাউকে বলতে পারবি না। কৃষক মজিদুল সারের প্রয়োজন থাকায় ৯৪০ টাকাতেই দুই বস্তা ডিএপি সার ক্রয় করেন। মজিদুলের সারের দাম ৯৫০ টাকা দিলেও ডিলার দবির কৃষক মজিদুলকে ৮০০ টাকা দরের স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেয়।

অপরদিকে, সার ডিলার তৌহিদ ট্রেডার্সের দোকান থেকে একই দিনে সমাজ কল্যাণ এলাকার কৃষক ইমরান আলী এক বস্তা ডিএপি সার কেনেন এক হাজার টাকা দিয়ে।

অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি সার ডিলার সিরাজুল ইসলাম, পলশ, ধানসুড়া বাজারে বিশ্বাস ট্রেডার্স, কালইর বাজারে নিলয় ট্রেডার্সসহ আরো বেশ কয়েকজন ডিলার সিন্ডিকেট করে চলতি মাসের সারের বরাদ্দ যথাসময়ের মধ্যে উত্তোলন না করে বাজারে সারের সংকট দেখিয়ে অসহায় সাধারণ কৃষকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে ডিএপি সার। তবে এসব সার ডিলার দাম বেশি নেওয়া বা কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেননি।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অনুমোদিত ডিলারকে বরাদ্দ সার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে হয়। সার উত্তোলনের পর উপজেলা মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অথবা সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃথক অথবা যৌথভাবে ডিলারের দোকান পরিদর্শন করে সার উত্তোলন ও সংরক্ষণের কাগজপত্র নিশ্চিত হবে। গুদাম থেকে সার উত্তোলনের পর পরিবহনের বরাদ্দপত্র, চালান ও বাফারের ছাড়পত্র, কোথায় সার যাবে, সেই ঠিকানা চালানপত্রে থাকা বাধ্যতামূলক।

স্বনামধন্য কয়েকজন সার ডিলার বাংলানিউজকে জানান, নাচোল উপজেলায় সার বিক্রিতে এসব মনিটরিং না করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। কোনো ডিলার সার উত্তোলন করতে না পারলে তার বরাদ্দ মনিটরিং কমিটির কাছে সমর্পণ করতে হয়, কিন্তু অভিযোগ আছে, উপজেলা সার মনিটরিং কমিটি বিষয়টি জানার পরও অজ্ঞাত কারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

এদিকে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ মঙ্গলবার সকালে সারের দাম বেশি নেওয়ায় নৈমুুউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে পলাশকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভর্তুকির সার বিক্রিতে কোনো নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না। কৃষক ভাইরা যদি সারে বেশি দাম নেওয়ার কথা প্রমাণ সাপেক্ষে বলেন, তাহলে ওই সার ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সার ডিলারদের মনিটরিংয়ের বিষয়ে তিনি জানান, উপজেলার সকল সার ডিলারদের বিধি মোতাবেক সার বিতরণ ও মনিটরিং করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রত্যেক সার ডিলারদের কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। সারে বেশি দাম নেওয়ার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।