ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ফের লাউয়াছড়া সংলগ্ন বন থেকে ফলের গাছ কাটার পাঁয়তারা 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
ফের লাউয়াছড়া সংলগ্ন বন থেকে ফলের গাছ কাটার পাঁয়তারা  চাউতলী বিটের প্রাকৃতিক ডুমুর। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পার্শ্ববর্তী বিটে মূল্যবান ফলদ বৃক্ষ কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। নানা প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক ফলের এইসব বৃক্ষরাশি নিধন হলে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মূল্যবান প্রাণীজগৎ।

দীর্ঘকাল ধরে তারা এসব গাছের ফল খেয়ে বেঁচে আছে।

চাউতলীতে কাগজে-কলমে যৎসামান্য সামাজিক বনায়নের গাছ দেখিয়ে মূল্যবান ফলদ বৃক্ষ কাটার চক্রান্ত চলছে। এসব সামাজিক গাছের মধ্যে রয়েছে একাশিয়া, বেলজিয়াম প্রভৃতি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী বিট চাউতলী। এ বিটের ফলের বাগানের আয়তন ৩২ হেক্টর। এখানে শতকরা ৯০ শতাংশ প্রাকৃতিক ফলের গাছে পরিপূর্ণ। যে গাছগুলোর বয়স প্রায় ৫০ থেকে ১শ বছর এবং এ গাছগুলোই বন্যপ্রাণীদের দৈনিক খাবারের জোগান দিয়ে থাকে। এখানে রয়েছে চাপালিশ, বহেরা, ডুমুর, হরিতকি, আমলকি, জারুল, রিঠা, ডেউয়া, লটকন, কাঠ বাদাম, লুকলুকি, কাউফল, বন উরি, কাটা জামসহ অর্ধশতাধিক প্রজাতির ফল আহরণ করেই বেঁচে আছে মূল্যবান বন্যপ্রাণীরা।

ওই বিটের রয়েছে অতিমূল্যবান সাতটি বড় বড় আকারের লোহা কাঠের গাছে। শতবর্ষী চাপালিক গাছও রয়েছে কয়েকটি। যেগুলো বের (পাশ) প্রায় ৩০ ফুট। এছাড়াও রয়েছে অতি বিরল প্রজাতির বড় আকারের ধূপ বা ধুনা গাছ। সামাজিক বনায়ন বা উপকারভোগীদের গাছ দেখিয়ে অতি মূল্যবান লোহাকাঠ, শতবর্ষী চাপালিশ, ধূপ গাছগুলো কেটে বিক্রি করাই তাদের টার্গেট। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক আ স ম ছালেহ সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, সংরক্ষিত বনে সামাজিক বনায়নের মানেই হলো সংরক্ষিত বনের মূল্যবান বৃক্ষ ধ্বংসের পাঁয়তারা। যার প্রভাব সরসারি লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণীর ওপর গিয়ে পড়বে। একটা সংঘবদ্ধচক্র এসব পরিবেশধ্বংসমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এগুলো সব-ই হলো সামাজিক বনায়নের নাম করে বনের শতবর্ষী প্রাকৃতিক ফলের গাছপালা ধ্বংস করে আর্থিক মুনাফা লাভের পাঁয়তারা।  

প্রাকৃতিক বনগুলো আজ একেবারেই বিপন্ন। চক্রান্ত করে প্রাকৃতিক বনের এসব মূল্যবান গাছ কাটা হলে আমরা আন্দোলনে নামবো বলে জানান বাপা মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক।

লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চাউতলী বিটের সামাজিক বনায়নের গাছগুলো কর্তন না করে উপকারভোগীদের কিছু টাকা দিয়ে দিলে কিন্তু কোনো গাছই আর কাটার সুযোগ থাকে না। এর মাধ্যমে মূল্যবান ফলের গাছগুলো কাটার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। আমাদের মতে, সংরক্ষিত বন সংরক্ষিতই থাকুক। একটি গাছও যাতে কাটা না হয় – আমরা এর পক্ষে।  

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চাউতলী বিটে মূল্যবান ফল গাছের পাশাপাশি কিছু সামাজিক বনায়নের গাছও রয়েছে। আমাদের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী মহোদয় সরেজমিন পরিদর্শন করার পর আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।