ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বটিয়াঘাটায় প্রথম চাষেই বাম্পার ফলনে ব্রি ধান-৯০

মাহাবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২০
বটিয়াঘাটায় প্রথম চাষেই বাম্পার ফলনে ব্রি ধান-৯০

খুলনা: খুলনা উপকূলীয় এলাকায় চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাঠে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৯০। মাত্র তিন কাঠা জমিতে চাষ করা এ উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সুগন্ধি ধানের বাম্পার  ফলন হয়েছে।



চিকন দানার এ সুগন্ধি ধানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন পাঁচ টন হওয়ায় তা উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় বড়ান জাতের ধানের মাঠে কেবল পুষ্পায়ন হচ্ছে। এসব ধান কাটতে আরও প্রায় দু’মাস সময় লাগবে। কিন্তু একই সময় রোপণ করে মাত্র ১১৮ দিনেরও কম সময়ে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় এ জাতের ধান নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

যেসব জমি মাঝারি উঁচু বা উঁচু সেখানে এ ধান চাষ করে মধ্য কার্তিকেই ধান কাটার পর সেখানে রবিশস্য চাষ বিশেষ করে সরষে, আলু, শাক-সবজি করা সম্ভব হবে। সাধারণত এ এলাকায় স্থানীয় জাতের আমন ধান অনেক নাবিতে পাকায় নতুন কোনো ফসল চাষ করা যায় না। ফলে এলাকার বেশিরভাগ জমি এক ফসলি এবং তা বছরের সাত থেকে আট মাসই ফাঁকা পড়ে থাকে। ব্রি ধান-৯০ একদিকে মাত্র চার মাসের মধ্যেই পাকে এবং ফলনও বেশি। স্থানীয় রাণী স্যালট, জটাই, হরকোচ, ভাটেল ধান হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে তিন থেকে চার টন। সেখানে ব্রিধান পাঁচ টন পর্যন্ত উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় এলাকায় মাঠ পর্যায়ে এ ধানের চাষ হওয়ার খবর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছেও নেই। এমনকি জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার দাউনিয়াফাদ গ্রামে চাষ হওয়া ব্রি ধান-৯০ সর্ম্পকেও খুব কম লোকে জানে।

বটিয়াঘাটা উপজেলার গুপ্তমারি গ্রামের কৃষক রণজিত রায় এবারই প্রথম ব্রি ধান-৯০ এর চাষ করেন। তাকে ব্রি থেকে এক কেজি বীজ সংগ্রহ করে দেন একজন সৌখিন ধান চাষি। ধান পাকার পর ফলন দেখে অনেকরই এ ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।  

রণজিত রায় তার তিনকাঠা বর্গা জমিতে তিন মণ ফলন পাওয়ায় খুবই খুশি।
তিনি বলেন, এত অল্প জমিতে চিকন ধানের এভাবে ভালো ফলন পাবো ভাবতেই পারিনি। এলাকার অনেকেই বীজ চেয়েছেন। প্রতি কেজি বীজ দেড় থেকে দুইশত টাকা দামেও কিনতে আগ্রহী কৃষকরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক জন নিয়েছেন দুই মণ বীজ। তিনি আগামী বছর তিন একর জমিতে এ ধান চাষ করবেন।

একই গ্রামের কৃষাণী আরতি রায় বলেন, এমন সুন্দর ছোট ছোট দানার ধানের এত ভালো ফলন আগে কখনও দেখিনি। এছাড়া আমরা যখন আমন ধান কাটি তখন পৌষ মাস। তার দু’মাস আগেই এখন এ ধান পেকেছে এটাই বড় ব্যাপার।

তিনি বলেন, আমি এর নাম দিয়েছি ‘মুসরি দানা’। এলাকার কেউ বলছেন ‘বেগুন বিচি’। আবার কেউ নাম দিয়েছেন ‘স্বর্ণালী ভোগ’। মুক্তার মতো ছড়ায় তাই এ ধানের চালের ভাত খেতে সুস্বাদু এবং তাতে সুগন্ধ থাকায় পোলাওসহ বিভিন্ন উৎসবে রান্নার উপযোগী।

এ ধানের চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য বলছেন ব্রির বিজ্ঞানিরা। কেবল খুলনা উপকূলীয় এলাকাতেই নয়, সারাদেশে আগাম আমন ধান হিসেবে ব্রি ধান-৯০ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে এমনটাই আশা করেন উদ্ভাবক ব্রির বিজ্ঞানিরা। গত ২০১৯ সালে এ জাতটি মাঠ পর্যায়ে চাষে ছাড়পত্র দেয় বীজ প্রত্যায়ন বোর্ড।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।