ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা সবজি ক্ষেতে ব্যস্ত চাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঠাকুরগাঁও: বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই জমি চাষ করে লাউ, করলা, বেগুন, কায়তাসহ বিভিন্ন শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।  

জমি চাষাবাদ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আবার ঝড় বৃষ্টি।

এরই মধ্যে কৃষকরা সবজি লাগানোর জন্য একের পর এক জমি চাষ করে যাচ্ছেন। একটু খড়া হলেই শুরু হয় জমি চাষের প্রক্রিয়া। বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে এভাবেই সবজি চাষ করার জন্য জমিকে উপযোগী করে তৈরি করছেন চাষিরা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক মাসের মধ্যেই ক্ষেত থেকে উঠবে আগাম শীতকালীন শাকসবজি। বেশি লাভ ও বাম্পার ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা চাষি ও কৃষি বিভাগের। বৈরী আবহাওয়া ও টানা ঝড় বৃষ্টির কারণে এবারের সবজি চাষাবাদ করতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানান সবজি চাষিরা।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সবজি চাষি খড়িবাড়ি গ্রামের রাসেল জানান, এবারের ঝড়-বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে জমিতে বেশি হাল চাষ করতে হচ্ছে। একটু খরা হলে শুরু হয় চাষাবাদ। আবার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যায় ঝড় বৃষ্টি। আবার খরা হলে নতুন করে চাষ করতে হয়। এভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে তৈরি করতে হচ্ছে সবজি চাষের জমি।

ঠাকুরগাঁও জেলার সবজি চাষি মতিউর রহমান বলেন, দুর্যোগ যখন আসে চতুর্দিক থেকেই আসে। একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আগাম সবজি চাষ করতে পারছিনা আমরা। মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে জীবনকে বাঁচাতে যেভাবে যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদের। ঠিক সেভাবেই আগাম সবজি চাষ করার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-বৃষ্টি সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। করোনার কারণে অনেক জেলার বেকার যুবকরা চাকরির দিকে না ঝুঁকে নেমে পড়েছেন সবজি চাষে।

সবজি ক্ষেতে মাচা চাষিরা।  ছবি: বাংলানিউজআবহাওয়া ভালো থাক আর না থাক তারপরও আগাম সবজি চাষ করতে পিছপা হননি সবজি চাষিরা। বর্তমানে বাজারে কম পাওয়া গেলেও মাসখানেকের মধ্যে সবজিতে ভরপুর হবে ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলো। দাম কিছুটা বেশি হলেও ভোক্তারা স্বাদ নেবেন শীতকালীন আগাম শাকসবজির। তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত সবজি খেতে বাঁশ কেটে মাচা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের মোলান খুড়ি গ্রামের সবজি চাষি মানিক বলেন, ঝড় বৃষ্টির কারণে অনেকে সবজি চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। গতবারে যে চাষি ১০ বিঘা সবজি চাষ করেছিলেন এবারে তা কমে এসেছে ছয় থেকে সাত বিঘায়। টানা বৃষ্টির কারণে অনেকেই জমিতে পানি থাকার কারণে সবজি চাষ করতে পারেন নাই। এবার সবজি চাষে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দাম ভাল পাবো বলে আশা করছি।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সবজি চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড় বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষে প্রচুর খরচ হচ্ছে। এবারে কলা চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে এক বিঘায় বিক্রি হবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।

কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, গতবারের তুলনায় এবারে জেলায় কম সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। গতবারে জেলায় আট হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছিল। টানা ঝড় বৃষ্টির কারণে এবার হয়েছে সাত হাজার হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হবে দুই লাখ মেট্রিক টন শাক-সবজি।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর তাই ফলন বেশি হয়। এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বরিশালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সবজি সংরক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করাসহ সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ অঞ্চলের কৃষকরা ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।