ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

নবান্নের আমেজ নেই হাওরপাড়ে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
নবান্নের আমেজ নেই হাওরপাড়ে পানিতে ছড়া পচে মাটিতে নুয়ে পড়া ধান অসহায় অবস্থায় ঘরে নিচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: আবহমান বাংলার ঐতিহ্য-সংস্কৃতির নবান্ন উৎসব মানে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সবুজের ফাঁকে ফাঁকে সোনালী ধানের উঁকি, হলুদের প্রশস্ত আবরণ, কৃষকের স্বস্তিভরা মুখে অম্লান হাসি, কৃষাণির উচ্ছ্বাস আর পিঠা-পুলির সম্ভার।

কিন্তু এসবের কোনো কিছুই নেই মৌলভীবাজারের হাওরপাড়ের কৃষকদের জীবনে। বন্যার পানি না নামায় আমন চাষে ব্যাঘাত ঘটায় আশানুরূপ ফলন পাননি তারা, ধান কাটার বর্তমান মাহেন্দ্রক্ষণেও সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

শেষ অবলম্বন হিসেবে বোরো ধান নিয়ে ব্যস্ত হলেও হাওরের পানিতে তাও নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে আছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চলতি মৌসুমে ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বন্যার পানি তাতে ব্যাঘাত ঘটায়। পরে এক থেকে দুই ফুট পানিতেই আমন রোপণে বাধ্য হয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু ধানে তোড় এলেও পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে হাওরের অধিকাংশ কৃষকই আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি এবার।

হাওরের অধিকাংশ আমনই এবার নষ্ট হওয়ায় আহার যোগাতেও পারছেন না কৃষক পরিবারগুলো।  ছবি: বাংলানিউজঅধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, শেষ পর্যন্ত ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করতে পেরেছিলেন চাষিরা। কিন্তু এ পর্যন্ত তার মাত্র ২৪ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন তারা। পানি এখনো থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

বুধবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের মাঝে ধান কাটার কোনো আমেজই নেই। জমিতে রোপিত আমন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কোথাও শীষ দাঁড়িয়ে থাকলেও ধান নেই, আবার কোথাও পানিতে ছড়া পচে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এসব ধান অসহায় অবস্থায় ঘরে নিচ্ছেন কৃষকরা। কেউ কেউ অভিমানে ক্ষেতের ধারে কাছেও যাচ্ছেন না।

এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি পাড়ের কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর একটু-আধটু আমনের চাষ করতে পারলেও এবার তাও সম্ভব হয়নি। বীজতলা করে সেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। পানি না নামায় ধান রোপণই করতে পারেননি অধিকাংশ চাষি।

রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বেড়িগাঁও গ্রামের কৃষক আজিজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বন্যার পানি না নামায় আমরা ধান রোপণ করতে পারিনি। বীজতলা তৈরি করে অনেকে বীজ নষ্ট করেছেন। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা কৃষকেরা। যেটুকু চাষ করতে পেরেছি, তাও নষ্ট হয়ে গেছে। খেয়ে বাঁচার কিছুই নেই এখন’।

হাওরে এখনো বন্যার পানি থাকায় শেষ ভরসা বোরো আবাদও অনিশ্চয়তায়।  ছবি: বাংলানিউজকৃষক আব্দুল হাই বলেন, ‘বছরের এ সময়টাতে আমাদের মাঝে হাসি-খুশি থাকতো। কিন্তু গত চার বছর ধরে বন্যা সেই হাসি কেড়ে নিয়েছে। তবে আমনের চাষ ভালোভাবে করা না গেলেও বোরোর আবাদ করা যেতো ঠিকমতো। এবার তাও সম্ভব হবে না। হাওরে এখনো পানি’।

সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা আমাদের এলাকার কৃষকদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। বছরের এ সময়টাতে কৃষকদের হাসি-আনন্দে থাকার কথা। কিন্তু আমনের চাষ সম্ভব না হওয়ায় আহার যোগাতেও পারছেন না অনেক কৃষক পরিবার। নবান্ন উৎসবের কোনো ছোঁয়াই নেই এখানে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।