ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

শীতের সবজি ক্ষেতে ঢলের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
শীতের সবজি ক্ষেতে ঢলের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন হালচাষে ব্যস্ত কৃষক/ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: সকাল সাড়ে ৭টা। কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্য সবে উকি দিতে শুরু করেছে। গ্রামের মেঠো পথ প্রায় জনমানবশূন্য। অন্যকোথাও গ্রামের বাসিন্দাদের দেখা না গেলেও, কাকডাকা ভোরেই সবজি ক্ষেতে কৃষকের সরব উপস্থিতি। আগাছা পরিষ্কার, নিড়ানি, চারা গাছের পরিচর্যা ও কীটনাশক প্রয়োগসহ যাবতীয় কাজে কোদাল হাতে বেশ খাটুনি দিয়েই শুরু হয়েছে প্রান্তিক কৃষকদের আজকের দিনটি।

বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার আমবাড়ীয়া এলাকায় ফসলের মাঠে কৃষকদের শীতের সবজি চাষের ব্যস্ততার চিত্র এমনই।

কথা হয় মাঠে কর্মরত কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে।

তারা জানান, দফায় দফায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পুরো বছরই লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। তাই এখন মৌসুমের শীতের সবজির উপরেই ভরসা।
সিম ক্ষেত পরির্চযায় ব্যস্ত ষাটোর্ধ এক কৃষক/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমআইয়ুব খান নামে এক কৃষক জানান, তিনি মোট ১৫ শতক জমিতে শসা চাষ করেছেন। চাষের শুরু থেকে ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত তার খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা। ঠিকমতো ফসল উঠলে ও দাম পেলে এ ক্ষেত থেকেই প্রায় ৫০ হাজার টাকার শসা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
ফুলকপি ক্ষেতে কোদাল হাতে কৃষক/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএর কিছু দূর গিয়ে কথা হয় কৃষক সবির হোসেনের সঙ্গে। দুই ছেলেসহ মাঠে কাজ করছেন তিনি। মোট ২৪ শতক জমিতে ফুল কপি চাষ করেছেন। তিনি জানান, গত ১০ অক্টোবর চারা রোপণ করেছেন, প্রতি ১৫ দিন পরপরই নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হয়, নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয় কীটনাশক। সবমিলিয়ে তার প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখান থেকে লাখ টাকা আয়ের আশা প্রকাশ করে সবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ধরনের দুর্যোগ না হলে ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতেই ফসল তোলা সম্ভব হবে।
মাচায় ঝুলছে লাউ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমপুরো এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এখানে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মূলা, করলা, পটোল, পালং ও লাল শাক, টমেটোসহ রকমারি শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। যেন সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে প্রান্তর। আর এ সবুজের মাঝেই দিন কাটছে কৃষকদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনমান ব্যস্ততা ফসলের মাঠেই।
মাচায় ঝুলছে শীতের সবজি চিচিঙ্গা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসবজি চাষ নিয়ে কথা হয় মিরসরাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবারের শীত মৌসুমে মিরসরাই উপজেলায় মোট ২ হাজার হেক্টর জমিতে মৌসুমী সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ১২শ’ হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
বরবটি সিমের ফুল/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবুলবুল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সবজি উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় জনপদ মিরসরাই। এ এলাকার সবজি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। উপজেলার করের হাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মিরসরাই সদর, খইয়াছড়া ও ওয়াহেদ পুরে বেশি সবজি চাষ হয়।
বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ফুল কপির চাষ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমতিনি আরো জানান, দফায় দফায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধান চাষে তেমন সুবিধা করতে না পারায় সবজি চাষের দিকেই আগ্রহী কৃষকরা। সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করে তিনি বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমি প্রয়োজন হয় না। মূলধন ও পরিশ্রমও তুলনামূলক কম। একটু সেবা-যত্ন করতে পারলেই সবজি চাষাবাদ করে যেকোনো কৃষক ভাগ্য ফেরাতে পারেন।
জমির আইলেই চাষাবাদ হচ্ছে কলা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমমাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবজি চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তাদের। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কথাও তুলে ধরেছেন তারা। কৃষকদের অভিযোগ, কোনো ধরনের সহযোগিতা করে না উপজেলা কৃষি অফিস।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
এসএইচডি/ওএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।