ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘বিনা চাষে রসুন বুইনে দ্বিগুণ লাভ’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৬
‘বিনা চাষে রসুন বুইনে দ্বিগুণ লাভ’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ: বিনা চাষে রসুন বুইনে দ্বিগুণ লাভ, খাটনি কম খরজও কম। আর ধান আবাদ কইরি খরজের ট্যাহাই ওঠে না।

খালি খালি বৃথা খাটনিই সার অয়। এজন্যি ফি বছর রসুনের আবাদই করি।

নিজ খেত থেকে মুঠি ভরে রসুন তুলতে তুলতে এসব কথা বললেন চলনবিলাঞ্চলের তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক আতাব আলী।

তিনি আরও বলেন, এবার পোনে তিন বিঘের মতো খেতে রসুন বুনছিল্যাম। কম করি হলিও খরজ বাদ দিয়্যা ৫০ হাজার ট্যাহা লাব ওইবো।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার চরকুশাবাড়ী, নাদোসৈয়দপুর, ধামাইচ, সবুজপাড়া, চরহামকুরিয়া, বিন্নাবাড়ী, হামকুড়িয়া, মাগুরাবিনোদ, দিঘীসগুনা, কুন্দইল, কুসাবড়ীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত কৃষক পেকে যাওয়া রসুন ঘরে তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন।   বিনাচাষে আবাদ করা রসুনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজারে দামও ভাল পাওয়ায় খুশি চাষিরা।


চলনবিলের হাট-বাজারগুলোতে এখন রসুনের ব্যাপক আমদানি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মশলা ব্যবসায়ীরা এসব হাটে এসে ভীড় করছেন।

কথা হয় দিঘীসগুনা গ্রামের কৃষক আলম, শহীদুল ও মাগুরা বিনোদ গ্রামের ওসমান আলী, নবি উদ্দিন, রিয়াজ মিস্ত্রি, শাহজামাল খান, দবির আলীসহ অনেকের সঙ্গে।

তারা বলেন, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেজা মাটিতে রসুনের বীজ বপণ করি। এক্ষেত্রে চাষ ও সেচ দেওয়ার কোন দরকার হয় না। রসুনের চারা গজানোর কিছুদিন পর নিরানী দিয়ে সার দেই। তারপর আর কোনো কাজ নেই। তিন থেকে সাড়ে তিনমাস পর রসুনের গোলা বড় হয়ে গেলে সেগুলো তুলে নিয়ে আসি।    

কৃষকেরা আরও বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের বীজ বপণ থেকে শুরু করে নিরানী ও সার দেওয়া পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর যদি ফলন ভালো হয় তাহলে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ মণ রসূণ উৎপাদন হয়। প্রতি মণ রসুন বিক্রি করা হয় ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায়। এতে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার রসুণ বিক্রি করা যায়।  

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, শীতের শুরুতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মাটি কিছুটা ভেজা থাকে। আর এ মাটিই রসুন চাষের জন্য উপযোগী। শুধুমাত্র চলনবিলের তাড়াশ উপজেলাতেই প্রতি বছর সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়। এই এলাকার কৃষক এ বছর ৫৭৬ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করেছেন। চলনবিলের অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও প্রচুর রসুনের চাষ করা হয়। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা রসুন চাষের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছেন।  


তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চলনবিলে রসুনের আবাদ অনেক ভালো হয়। সে কারণে কৃষকরা দিন দিন রসুন চাষে অগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ বছর রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও সঠিক পাচ্ছেন কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ওমর আলী শেখ বলেন, এ অঞ্চলের কৃষক একসময় রসুন চাষ প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে বিনা চাষে রসুনের আবাদ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আবার এদিকেই ঝুঁকছেন। এ বছর কৃষি অফিস থেকে রসুন চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ফলনও হয়েছে ভাল। একর প্রতি গড়ে এবার ৭০ মণ করে রসুনের আবাদ হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।