ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মৌসুমের শুরুতেই বাগদা চিংড়িতে মড়ক, হতাশ চাষীরা

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
মৌসুমের শুরুতেই বাগদা চিংড়িতে মড়ক, হতাশ চাষীরা বাগেরহাটে ঘেরে মড়ক লাগায় মারা যাচ্ছে বাগদা চিংড়ি

বাগেরহাট: বাগেরহাটে মৌসুমের শুরুতেই বাগদা চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহ, স্বল্প পানি ও ভাইরাসের কারণে আশঙ্কজানক হারে মরে যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি।

চোখের সামনেই বিক্রয়যোগ্য বাগদা চিংড়ি মরে, পচে যাচ্ছে। মরা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই মাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে ঘের। জেলায় সব থেকে বেশি মাছ মরেছে রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি চাষে এমন বিপর্যয়ে বাগেরহাটের অধিকাংশ চাষি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। লোকসানের শঙ্কায় হতাশা বিরাজ করছে তাদের মাঝে। এ অবস্থায় ঘেরের পানি বাড়ানোর পাশাপাশি চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৭২,৭২৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭৭,০০০ ঘের রয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫,৬৭২ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল। ২২-২৩ অর্থ বছরে একই পরিমাণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু মাছে মড়ক দেখা দেওয়ায় উৎপাদন ব্যহত হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের চিংড়ি চাষী আবু সাইদ শেখ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পুঁজি নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছি। প্রচণ্ড তাপদাহ ও ভাইরাসের কারণে ৯০ শতাংশ মাছ মারা গেছে। কী হবে জানি না।

একই উপজেলার গাববুনিয়া গ্রামের আরাফাত ইসলামের ছোট ছোট সাতটি ঘের রয়েছে। সাতটি ঘেরেই লেগেছে মড়ক। ইতোমধ্যে জমির হাড়ি, পোনা ও খাবারে ২০ লাখ টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে। এখন পুঁজিই ফেরত আসে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় এই চিংড়িচাষী।

পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোংলার চিলা এলাকার সেলিম শেখ বলেন, লবনাক্ততার কারণে জমিতে ধান হয় না। চিংড়ির ওপর ভরসা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। প্রতিবছর একটার পর একটা সমস্যা এসে হাজির হয়। হয়ত ভাইরাস, নয়ত পানি কম, নয়ত ঝড়-বন্যা একটা না একটা সমস্যা থাকবেই।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া এলাকার লুৎফর রহমান বলেন, এবার বাগদার উৎপাদন ভাল হয়েছিল। কিন্তু যখন প্রায় বিক্রির উপযোগী হয়েছে, তখনই শুরু হলো মড়ক। মূল টাকা ওঠা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। শুধু আমার নয়, গত ১৫দিন ধরে বেশির ভাগ ঘেরের মাছ মারা যাচ্ছে।

লোকসানের শঙ্কায় চিন্তার ভাজ এখন চাষীদের কপালে। তাদের ঘুরে দাড়োনোর জন্য সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির নেতারা।

সভাপতি ফকির মুহিতুর রহমান সুমন বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য চাষীরা ধারদেনা করে চাষ শুরু করেছিল। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই মাছ মারা যাওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। চিংড়ি শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে চাষীদেরকে পরিকল্পিতভাবে চাষের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

মড়ক লাগার বিষয়টি স্বীকার করে বাগেরহাটের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, মারা যাওয়া বাগদা চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে তাপমাত্রা বেড়েছে। কিন্তু ঘেরের গভীরতা ও পানির পরিমাণ বাড়েনি। যার ফলে অতিরিক্ত তাপদাহে মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া সঠিকভাবে ঘের পরিচর্যা না করায়ও ভাইরাসসহ নানা রোগ লেগে মাছ মারা যায়। এসবের জন্য চাষীদের পানির গভীরতা বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের কর্মীরা সব সময় চাষীদের পাশে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।