ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

স্বপ্নের বাগান থেকেই সংসার চলে হেম কুমারের

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩
স্বপ্নের বাগান থেকেই সংসার চলে হেম কুমারের

রাঙামাটি: পার্বত্যাঞ্চলের মধ্যমণি রাঙামাটির মাটিতে যেন সোনা ফলে। এখানকার মাটি এত উর্বর যে, সব ধরনের চাষাবাদের জন্যই তা আদর্শ।

সোনাফলা মাটিতে চাষাবাদের জন্য বর্তমান সরকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।

এক সময়কার পিছিয়ে পড়া অঞ্চল রাঙামাটিতে বর্তমানে কৃষি বিপ্লব শুরু হয়েছে। পাহাড়ের এক ইঞ্চি মাটিও যেন খালি না থাকে, সেই লক্ষ্যে সরকার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ অঞ্চলে কাজ করছে। সরকারের এ উদ্যোগকে সাদরে গ্রহণ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।  

সমিতি, ক্লাব, যৌথ এবং ব্যক্তি মালিকানায় পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠছে ফল, ফুল আর সবজির বাগান। পুরো পাহাড়ে কৃষি বিপ্লব শুরু হয়েছে। ফুলে-ফলে ভরে গেছে সবুজ পাহাড়।

কৃষির উন্নয়নে সরকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা, সার, কীটনাশক, বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি সহযোগিতা এমনকি নগদ অর্থও দিচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে এখন শুধু কৃষির সফলতার গল্প।

সরকার ঘোষিত কৃষির সব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন রাঙামাটি সদর উপজেলার সাফছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর এলাকার স্থানীয় কৃষক হেম কুমার চাকমা। তিনি নিজের এক একর জমিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় স্বপ্নের একটি মিশ্র ফল এবং সবজির বাগান করেছেন।

হেম কুমারের পরিশ্রমে গড়ে তোলা এ বাগানে ২৪ ধরনের উন্নত জাতের আম, ভিয়েতনামি নারিকেল, মাল্টা, পেঁপে, কলা, কদবেল, বড়ই, লিচু, আখ, সুপারি, শরিফা, লটকন, ডালিম, আমড়া, পেয়ারাসহ অসংখ্য ফলের গাছ রয়েছে। সেই সঙ্গে লাল শাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, মরিচ, কাঁকরোলসহ নানা জাতের সবজি শোভা পাচ্ছে এ বাগানে। এ বাগান বর্তমানে তার সংসারের চাকা ঘুরাচ্ছে।

হেম কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি শুরুতে মাল্টা বাগান করেছি। এর আগে ধান চাষ করেছি। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বেশ কয়েক বছর আগে আমার এক একর জমিতে মিশ্র বাগান গড়ে তুলি। এরপর আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমার আরও দু’টি ফলের বাগান রয়েছে। আমার দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের একজন ডিগ্রি পাস করে বর্তমানে ফলের ব্যবসা করছে। আর ছোট মেয়ে কলেজে পড়ছে। বাগান পরিচর্যায় আমার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে সাহায্য করছে। যে কারণে আমার কাজের গতি বহুগুণ বেড়েছে। আমার তিনটি বাগান থেকে বছরে ছয় লাখ টাকা আয় হয়।  

শুকরছড়ি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের ঘোষণা, এক ইঞ্চি জমিও খালি থাকবে না। আমরা দিন-রাত কৃষির উন্নয়নে কাজ করছি। আমার ব্লকের যতজন কৃষক আছেন, তাদের সহযোগিতা করছি।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, সফল কৃষক হেম কুমার চাকমা এক সময় তার জমিতে ধান চাষ করলেও আমার পরামর্শে বেশ কয়েক বছর আগে মিশ্র বাগান গড়ে তোলেন। এতে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশ মেনে কৃষির আমূল পরিবর্তনে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কৃষকদের দিচ্ছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা, পরামর্শ।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষকরা কোনো প্রয়োজনে আমাদের কাছে আসার আগেই আমরা তাদের কাছে হাজির হই সহযোগিতা করতে। কারণ কৃষি আমাদের দেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। সরকারি নির্দেশ মেনে কৃষকদের সহযোগিতা করছি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি থাকায় কৃষি খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে রাঙামাটি। আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন কৃষক, সমৃদ্ধ হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। এখানকার উৎপাদিত ফসল দেশের মানুষের খাদ্য যোগানে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।