ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ভুট্টা চাষে লাভবান বগুড়ার চাষি

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
ভুট্টা চাষে লাভবান বগুড়ার চাষি ভুট্টা রোদে দিচ্ছেন এক নারী। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বগুড়ায় এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক স্থানে ভুট্টা কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে।

প্রতি মণ কাচা ভুট্টা ৯শ টাকা এবং শুকনা ভুট্টা ১১শ থেকে ১৩শ টাকায় বিক্রি করছেন এ জেলার কৃষক। বাজারে ভুট্টার দাম ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

সম্প্রতি  বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও শেরপুর উপজেলা ঘুরে ভুট্টা নিয়ে চাষিদের নানান কর্মযজ্ঞতা চোখে পড়ে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় উত্তরের জেলা বগুড়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টা চাষ। এ কারণে কৃষকরা অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্ট্ চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। চাষিদের যেসব জমিতে আগে শোভা পেতো কাউন, তিসি, মরিচ, কচুসহ অন্যান্য ফসল সেসব জমিতে ভুট্টা চাষাবাদে উৎসাহী হচ্ছেন তারা।



জেলা বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এবার ১২ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এরমধ্যে চরাঞ্চলের তিনটি উপজেলায় প্রায় নয় হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা লাগানো হয়েছে। এ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার ৬শ ৮৮ মেট্রিক টন। জেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট এবং গাবতলী, শাজাহানপুর, শেরপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ভুট্টা চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা।

এ বছর জেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমেও ভুট্টা লাগিয়েছেন। কৃষকদের চাষাবাদের তালিকায় রয়েছে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা। যেমন এন এইচ-৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০, এম গোল্ড-৯০০ ইত্যাদি রবি ও খরিপ মৌসুমি ভুট্টা।


বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের চাষিরা জানান, যমুনা বেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় ভুট্টার চাষাবাদ বেশি হয়ে থাকে। প্রত্যেক বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানিতে টইটম্বুর থাকে যমুনা। তখন হিংস্র রূপ ধারণ করে যমুনা। কখনও সময়ের ব্যবধান শান্ত হয়ে আসে সেই হিংস্র যমুনা। চারদিকে জেগে ওঠে ধূ-ধূ বালুচর। চরের পলি বা বেলে যুক্ত মাটি সাধারণত পানি ধরে রাখতে পারে না। পানির স্তরও তেমন একটা ভালো না। ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চরাঞ্চলের মানুষের টিকে থাকতে হয়। তাই স্বল্প সেচের ফসল চরের মাটিতে চাষের চিন্তা করতে হয় তাদের।


ভুট্টাও তেমন একটি ফসল। ভুট্টার জমিতে সেচ কম দিতে হয়। ফলনও বেশ ভালো হয়। প্রায় সময়ই বাজারে দাম ভালো থাকে এ ফসলের। ধান চাষের তুলনায় অনেকটা লাভজনক। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় ভুট্টার ফল বাদে বাকি অংশ। গো-খাদ্যের জন্য উপযুক্ত ভুট্টার গাছ। অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায় এ ভুট্টা। রোগবালাই তেমন একটা নেই। মানুষের নানা ধরনের খাদ্য ও শিল্পজাত ছাড়াও বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এ ফসল। সব মিলিয়ে ভুট্টাতে ভাগ্য বদলাতে চান চরাঞ্চলের মানুষজন।

সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার চাষি মোকছেদুল মোল্লা, জুলহাস মিয়া বাংলানিউজকে জানান, চরাঞ্চলের কৃষক প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর আগে থেকে অল্প অল্প করে ভুট্টার আবাদ শুরু করে। সময়ের ব্যবধানে চাষের জমির পরিধি বাড়িয়ে দেন তারা। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও চরের অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। খেতের ভুট্টা উঠতে শুরু করেছে এপ্রিলে শেষের দিকে থেকে। বাজারে বেশ ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

তারা বলেন, চরাঞ্চলে উৎপাদিত ভুট্টার দানা অত্যন্ত পুষ্ট হয়। দানাও বেশ বড় হয়। চরের তপ্ত বেলে মাটির ওপর বিশেষভাবে নেট ফেলে তার ওপর ভুট্টা শুকানো হয়। এতে ভুট্টার দানা অত্যন্ত শক্ত হয়। ফলে চরের ভুট্টা উঠতেই বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসব এলাকায় বেপারী পাঠিয়ে দেন।



চাষি প্রশান্ত দত্ত, আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে জানান, চরের মাটি বেলে যুক্ত। পানি ধরে রাখতে পারে না। ফসলের জমিতে পানি দিতে না পারলে ফসল ভালো হয় না। তবে ভুট্টার জমিতে খুব একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। ধানের তুলনায় এ ফসল চাষ করাও অনেকটা সহজ। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছে চরাঞ্চলের ভুট্টার চাহিদাও ভালো। এ কারণে বিক্রি করতেও সমস্যা হয় না।

তারা বলেন, প্রতি বিঘার বিপরীতে তাদের খরচ হবে সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা। এরমধ্যে বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় গড়ে ৪০-৪৫ মণ হারে। প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১১শ থেকে ১৩শ টাকা মণ হিসাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, ভুট্টার আয়ুকাল ১১০ থেকে ১৩০ দিন হওয়ায় এবং ফলন ও চাহিদা থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে। দিন যতোই যাচ্ছে, চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। তুলনামূলক স্বল্প খরচে এ ফসল চাষ করা যায়। লাভ বেশি হয়। এছাড়া সেচ কম লাগে। এসব বিবেচনায় চরাঞ্চলের মানুষের কাছে ভুট্টা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কৃষিখাত এগিয়ে নিতে বগুড়ার কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষে প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বলেও যোগ করেন কৃষিবিদ এনামুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।