ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আখ সংকটে ধুঁকছে কেরু চিনিকল

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
আখ সংকটে ধুঁকছে কেরু চিনিকল

চুয়াডাঙ্গা: চিনির প্রধান কাঁচামাল আখ সংকটে ধুঁকছে দেশের বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। আখ উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রতিবছরই কমছে চিনির উৎপাদন।

১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৮৫ বছরের ইতিহাসে সবশেষ মৌসুমে সর্বনিম্ন চিনি উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে কেরু। ২০২২-২৩ মৌসুমে চিনি উৎপাদনের হিসাব আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তবে এ মৌসুমে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিরুপণ করতে পরেনি চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আওতাধীন হাজার হাজার একর জমিতে আখ চাষের শর্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আখের জমিতে চাষ হচ্ছে অন্য ফসল। চিনিশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আখ চাষের বিকল্প নেই, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, কেরু চিনিকলে প্রতি মৌসুমে কমছে চিনি আহরণের হার। সবশেষ ২০২২-২৩ মৌসুমে আখ সংকটে মাত্র ৪২ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় মিল। চিনি উৎপাদনেও সর্বনিম্নের রেকর্ড গড়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এ অল্প কদিনে ৪৬ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি আহরণ হয় ২ হাজার ৩৮১ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ মাড়াই মৌসুমে ৫১ দিনে ৫৩ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি আহরণ হয় ৩ হাজার ২৩ মেট্রিক টন।  

২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে ৯৪ দিন মিল চালু ছিল। সেসময় ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮৮৩ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়।

প্রতিবছর চিনি উৎপাদনের এমন দুরবস্থার কারণ হিসেবে আখ চাষের পরিমাণ কমে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। মূলত আখের উৎপাদন কম হওয়ায় চিনি উৎপাদনে ভাটা পড়ছে। আখ চাষিরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদি ফসল, ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ বিভিন্ন ঝক্কি ঝামেলার কারণে আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এক সময় এ অঞ্চলে হাজার হাজার একর জমিতে আখ চাষ হতো। কিন্তু এখন সেখানে ধান, পাট, ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এসব ফসলে আখ চাষের তুলনায় ভালো লাভ হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া সময় মতো মিল থেকে চাষিদের সার, বীজ সরবরাহ না করা, সময় মতো আখ সংগ্রহ না করা ও উন্নত জাতের আখ না দিয়ে পুরোনো একই জাতের আখ সরবরাহ করার কারণেও কমছে আখ চাষির সংখ্যা।

আখচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী জানান, আখ দেড় বছরের ফসল। সে হিসেবে দেড় বছরে দুবার পাট, তিনবার ধান ও ভুট্টাসহ অন্যান্য শস্য-সবজি চাষ করে চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। এজন্য আখ চাষ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

কেরু কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানে কৃষি খামারের আওতায় জমি রয়েছে ৩ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৫৬ একর। যার মধ্যে চাষযোগ্য বাণিজ্যিক খামারের জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫ দশমিক ৮৪ একর। প্রতি মৌসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ গড়ে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করে।

কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চিনিকলের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে আখ। আখ না থাকলে মিল চলবে না। শুধু চিনি উৎপাদনেই না, বাধার মুখে পড়বে কেরুর সব উৎপাদন কার্যক্রম। এজন্য আখ চাষে গুরুত্ব দিতে হবে। আখ চাষের জন্য বিভিন্ন সময় নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরও বাড়ছে না আখের চাষ। এজন্য সরকারি নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

আখ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে সরকার আখের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া কৃষকদের সঙ্গে সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠক চলছে। এলাকার চাষিদের বেশি বেশি আখ চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি মূল্যবান সম্পদ কেরু চিনিকলটি রক্ষার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু বলেন, চাষিরা আখ চাষ না করলে আমরা মিল চালাতে পারব না। আমরা চাষিদের এর থেকে বেশি দিতেও পারব না। সারা বিশ্বের মধ্যে আমরাই সর্বোচ্চ মূল্য দিই। চাষিরা লাভবান হলেই আখ চাষ করবে। একটি চিনিকল কমপক্ষে তিন মাস না চালালে মিলগুলো টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।