ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

রাজবাড়ীতে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার তুলা উৎপাদন

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিষ্ট্রিক্টকরেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
রাজবাড়ীতে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার তুলা উৎপাদন

রাজবাড়ী: স্বল্প বিনিয়োগে অল্প পরিশ্রমে তুলা চাষে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকরা।  

জেলায় বাড়ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের কার্পাস তুলার চাষ।

অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন এই তুলা চাষে।  

জেলায় উৎপাদিত তুলা বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রান্তিক পর্যায়ে এসব তুলা ক্ষেতে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন স্থানীয় নারী পুরুষরা। কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি এতে উন্নয়ন ঘটছে গ্রামীণ অর্থনীতির।  

চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে ১৪১ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১৯ হাজার ৩৫ মণ তুলা। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

রাজবাড়ী জেলার মাটি ও আবহাওয়া তুলা চাষে উপযোগী হওয়ায় জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলাতে দিন দিন বাড়ছে উচ্চ ফলনশীল রূপালী, হোয়াইট গোল্ড, ডি এম, শুভ্র জাতের কার্পাস তুলার চাষ। জেলার বালিয়াকান্দিতে চলতি মৌসুমে ১৪১ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন ৪ শতাধিক কৃষক।  
স্বল্প বিনিয়োগ করে অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকেরা এখন তুলা চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ২২ শতাংশ জমিতে মাত্র ৪শ গ্রাম বীজ বপনেই তুলার ফলন হয় গড়ে ৮/৯ মণ। প্রতি মণ তুলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে। খাদ্য শষ্য বা সবজি উৎপাদন থেকে তুলা চাষে মুনাফা বেশি হওয়ায় দিন দিন তুলা চাষির সংখ্যা বাড়ছে  বালিয়াকান্দিতে।

তুলা চাষি প্রশান্ত কুমার পাল বলেন, আমি গত ৫ বছর ধরে তুলা চাষ করছি। এ বছর ৭৭ শতাংশ জমিতে তুলা চাষ করেছি। আগে আমি ধান, পাট, গমসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করতাম। প্রতি পাকি জমিতে (৩৩ শতাংশ জমিতে এক পাকি) ৩ হাজার থেকে ৩৫০০টি তুলা গাছ আছে। তুলা চাষ লাভজনক। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় তুলার মানও ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘাতে ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত তুলা হয়। তুলার দাম বৃদ্ধির জন্যে সরকারের কাছে আবেদন জানাই যেন ৪ হাজার টাকা মণ তুলার দাম নির্ধারিত হয়। বর্তমানে প্রতি মণ তুলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে।

আরেক তুলা চাষি শুশান্ত কুমার পাল বলেন, ১০ বছর ধরে আমি তুলা চাষ করি। অনান্য ফসলের চেষে তুলা লাভ জনক ফসল। তুলা দিয়ে আমাদের দেশে বালিশ, লেপ, পুতুল, সুতাসহ অনেক কিছু তৈরি হয়। সুতাগুলো বিদেশে রপ্তানি হয়। প্রতি শতাংশে ২২শ টাকার ফসল আসে। বর্তমানে তুলা চাষাবাদে লাভ হচ্ছে।

তুলা চাষি মিলন মণ্ডল বলেন, আমরা রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি অনেকেই তুলা চাষ করছি। প্রতি শতাংশে ১৮ থেকে ২০ কেজি তুলা উৎপাদন হচ্ছে।  

তুলা ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিক ফরিদ সেখ জানান, তুলা সংগ্রহের কাজ পাচ্ছেন এই এলাকার হত দরিদ্র নারী ও পুরুষরা। তুলা সংগ্রহ করে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন তারা।

তুলা সংগ্রহকারী নারী শ্রমিক ফাহিমা বেগম (৪০) জানান, আমরা এই গ্রামের কয়েকশ নারী পুরুষ তুলা বাগানে তুলা সংগ্রহের কাজ করছি। প্রতিদিন দেড়শ টাকা মজুরী পাই। এতে আমাদের একটা কাজের সুযোগ হয়েছে।

আরেক নারী শ্রমিক মনোয়ারা বেগম (৪৫) বলেন, প্রতিবছর এ সময়ে যখন ক্ষেতে তুলা ফোটে তখন আমরা গ্রামের অসহায় নারীরা তুলা বাগানে কাজ করে কিছু আয় করি।

প্রতিবন্ধী শ্রমিক হাশেম (৫৬) বলেন, আমার মত অনেক অসহায় গরিব নারী পুরুষ তুলা ক্ষেতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। তুলা সংগ্রহ করতে বেশি কষ্ট হয় না। আমরা আয় করার একটা পথ পেয়েছি।

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার কটন ইউনিট অফিসার ফারজানা মুক্তাদির বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩৫ মণ তুলা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। তুলা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এই তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। বালিয়াকান্দি ইউনিটে চলতি মৌসুমে ১৪১ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন ৪ শতাধিক কৃষক। এ বছর সর্বোচ্চ ফলনের আশা রয়েছে। বালিয়াকান্দির মাটি ও জলবায়ু তুলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এই এলাকায় তুলা চাষ জনপ্রিয়। তুলা চাষাবাদ বাড়াতে নিয়মিত কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ঋণ সহায়তার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা। চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে ১৪১ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১৯ হাজার ৩৫ মণ তুলা। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।