ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

এক গ্রামেই ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
এক গ্রামেই ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ

নীলফামারী: নীলফামারী জেলার এক গ্রামের প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে আবাদ করা হয়েছে সরিষার চাষ। এ যেনে ফসলি মাঠে বুকে দিগন্তজুড়ে বিছানো হলুদরঙা কার্পেট।

এতে হলুদের আভা ছড়াচ্ছে পুরো এলাকাজুড়ে। মৌমাছির আনাগোনাও ব্যাপক সেখানে।  

ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে নীলফামারী সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কাচারিপাড়া গ্রামে এবার ব্যাপক সরিষা চাষ করা হয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানকার ১৪০ জন কৃষক প্রায় ৪১ হেক্টর অর্থাৎ ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। সরিষা চাষে সেই গ্রামের চিত্র বদলে গেছে। এলাকা পরিদর্শনে আসছেন কৃষি কর্মকর্তারা। মাঘ মাসের কুয়াশা রোদমাখা চোখে পড়বে এক ঝাক পাখিদের কিচিরমিচির ও ওড়াউড়ির হলুদ-সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। সরিষা ফুলের ঘ্রাণ ফুসফুসের উপকার হয় বলে মানুষজন ক্ষেতজুড়ে ঘ্রাণ নিতেও ছুটে যান। সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর এ জেলায় সরিষা আবাদ হয়েছিল সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে। এবার আবাদ হয়েছে ছয় হাজার ৭৭৭ হেক্টরে। এই পরিমাণ জমিতে ৯ হাজার ১০০ টন সরিষায় ৩৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকার কৃষকেরা আমন মৌসুমে আমন ও বোরো মৌসুমে বোরো আবাদ করতেন। এর মাঝে কিছু সময় জমি পতিত অবস্থায় থাকত। কিন্তু এবার তারা উন্নত জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। এতে আমনে বেশি ফলন পাওয়ার পাশাপাশি সরিষা চাষের কারণে আর্থিকভাবেও তারা লাভবান হবেন।

কৃষক জাহাঙ্গীর এ বছর নিজের তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগে আমি শুধু আমন ও বোরো করতাম। এবারই প্রথম সরিষা চাষ করেছি। আগে দুই ফসল পেতাম, কিন্তু জাত পরিবর্তনের ফলে এবার তিন ফসল পাচ্ছি।

সরিষা চাষি হারুন উর রশিদ জানান, তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। গতবার যেখানে করেছিলেন তিন বিঘা জমিতে।

আরেক কৃষক আলমগীর ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই সময়ে সরিষা করেছি। সরিষাতে খরচ চার হাজার টাকার মতো বিঘা প্রতি। ফলন ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। পাশাপাশি সরিষার টাকা দিয়ে বোরো আবাদ উঠে যায়। সরিষার কোনো কিছু ফেলা যায় না, গাছ খড়ি এবং খৈল গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেক লাভ সরিষাতে। আর ১৫ দিন পরই সরিষা কাটাই মাড়াই শুরু হবে। গতবার আবাদ একটু কম হলেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারও ভালো।

ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করে এবং পরামর্শ দিয়ে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে এখন ১৪০ জন কৃষক সরিষা করছেন। এই গ্রাম এখন সরিষা গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিঘা প্রতি পাঁচ মণ উৎপাদন হবে সরিষা, যেখানে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হবে।  

সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরিষার চাষে সরকারের প্রণোদনা সফল হয়েছে। দিন দিন সরিষার চাষির সংখ্যা আরও বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছেন এ এলাকার কৃষকরা। এখন আর পতিত থাকছে না কোনো জমি। আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারের দেওয়া ভোজ্য তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ ভাগ পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ উৎপাদন হচ্ছে।  

তিনি বলেন, শুধু কুন্দপুকুর নয় জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩  
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।